ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা: সেই ছাত্রীকে বাঁচানো গেলো না
বাংলাদেশ

ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা: সেই ছাত্রীকে বাঁচানো গেলো না

বগুড়ার শিবগঞ্জে ধর্ষণের পর গায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দগ্ধ সেই মাদ্রাসাশিক্ষার্থীর (১৭) মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৪০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। 

বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ। ওই শিক্ষার্থী আটমূল ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং নান্দুরা ফাজিল মাদ্রাসার আলিম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। 

ওসি বলেন, ‘চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই মাদ্রাসাশিক্ষার্থী মারা গেছেন। এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দুই জনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’ 

মারা যাওয়া শিক্ষার্থীর চাচা বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুরে ভাতিজির শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একপর্যায়ে দুপুর ১টার দিকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এরপর রাত ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। বুধবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বিকালে মরদেহ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছি আমরা।’

৪০ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ অপর দুই আসামিকে গ্রেফতার করেনি অভিযোগ করে শিক্ষার্থীর চাচা আরও বলেন, ‘আসামি ও তাদের স্বজনরা মামলা তুলে নিতে আমাদের হুমকি দিয়ে আসছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’ 

এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে তিন ব্যক্তি। পরে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা দগ্ধ ছাত্রীকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর শিবগঞ্জ থানায় তিন জনকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা করেন ছাত্রীর বাবা। পরে মূল আসামি সাইফুল ইসলামকে (২৮) গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার বাকি দুই আসামি নুরুন্নবী রঞ্জু (৪০) ও নাঈম প্রামাণিক (২২) পলাতক রয়েছে।

মামলার এজাহার ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে প্রতিবেশী সাইদুর রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম বেড়ার ফাঁক দিয়ে ওই ছাত্রীর গোসলের দৃশ্য দেখছিল। এ অবস্থায় তাকে হাতেনাতে ধরা হয়। পরে ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা সাইফুলকে শাসন করেন। এর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ খুঁজছিল সাইফুল। গত ৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রীর বাবা-মা ও বোন জয়পুরহাটে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। তখন বাড়িতে ছিলেন ছাত্রী ও তার দাদা। দুপুরে দাদা স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়তে যান। এ সুযোগে সাইফুল ও তার সহযোগীরা ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। এতে অচেতন হয়ে পড়ে। পরে ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। পরদিন ছাত্রীর বাবা মামলা করলে সাইফুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাইফুল বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তবে মামলার অপর দুই আসামি নাঈম ও রঞ্জুকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। 

শিবগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর রউফ বলেন, ‘প্রধান আসামি সাইফুল কারাগারে আছে। সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছিল। এখন তার সঙ্গে হত্যার ধারা যোগ হবে। অপর দুই আসামি আত্মগোপন করায় গ্রেফতার করা যায়নি। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

Source link

Related posts

চট্টগ্রামে চালবোঝাই ট্রাক উল্টে নিহত ৩

News Desk

‘ব্রহ্মপুত্রে ভাঙবার ধরলে কলিজাটা থা‌কে না’

News Desk

সড়কে মারা গেল কুকুরটি, সঙ্গে নিয়ে গেল দুই প্রাণ

News Desk

Leave a Comment