ময়মনসিংহ সদরের চর ঈশ্বরদিয়া গ্রামের বর্গা চাষি হারেজ আলী (৭৫) চলতি মৌসুমে ৪০ শতক জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করেন। কিন্তু একটি ধানও ঘরে তুলতে পারেননি। পরে ক্ষেতের খড় ঘরে এনেছেন গরুকে খাওয়ানোর জন্য। এখন ঋণ পরিশোধ করবেন কীভাবে, আর জমির মালিকের বর্গা চাষ বাবদ আট মণ ধান কীভাবে দেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
হারেজ আলী বলেন, ‘বোরো আবাদে ধানের ফলন ভালো হয়ে উঠছিল। এর মধ্যে গাছ থেকে শীষ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমিতে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এতে আক্রান্ত হয়ে গাছসহ ধান কালচে রঙ ধারণ করে মরতে শুরু করে। ধান পাক ধরার আগেই পুরো ক্ষেত ব্লাস্ট রোগে পচে নষ্ট হয়ে রোদে শুকিয়ে খড়ে পরিণত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্লাস্ট রোগের কারণে ঘরে বোরো আবাদের ধান তুলতে না পারিনি। কিন্তু জমির মালিক তার ধান দাবি করছেন। এদিকে সুদের ধার নেওয়া টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে মহাজন। রোগ হানা না দিলে ৩০ মণের মতো ধান ঘরে তোলা যেতো। জমির মালিককে দিয়ে বাকি ধান থেকে বিক্রি করে সুদের টাকা পরিশোধের পর সংসারের খরচ চালাতে পারতাম। এখন কীভাবে সংসার চলবে?’
শুধু হারেজ আলি না, একই অবস্থা ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের বোরো ধান আবাদ করা অধিকাংশ চাষির। বেশিরভাগ চাষির ক্ষেতেই ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগ হানা দিয়েছে। পচে চিটা হওয়া ধান ঘরে তুলতে পারেননি অনেক চাষি।
একই এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম জানান, তিনি চলতি মৌসুমে এক একর জমিতে বোরো আবাদ করেছিলেন। ভেবেছিলেন, এই জমি থেকে ৮০ মণের বেশি ধান পাবেন। কিন্তু ব্লাস্ট রোগে ক্ষেত থেকে মাত্র ৩০ মণ ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন। এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি।
চর হরিপুর এলাকার চাষি কলিম উদ্দিন বলেন, ‘গাছ থেকে শীষ বের হওয়ার পরই ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। এ সময় পরামর্শের জন্য কৃষি বিভাগের কোনও কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে মাঠে পাওয়া যায়নি। কৃষি কর্মকর্তারা এখন আর মাঠে তেমন একটা আসেন না।’
শম্ভুগঞ্জ চায়নামোড়ের কৃষক আবু সাঈদ জানান, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতির কারণেই এবার কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে তাদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হলে কিছুটা রক্ষা পাবেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে ময়মনসিংহ জেলায় দুই লাখ ৬২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ লাখ চার হাজার ৮৯৫ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মতিউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, জেলার ১৩ উপজেলায় ৫৫ হেক্টর জমিতে ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে অন্যান্য ধানের ফলন ভালো হওয়ায় এই ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে যাবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন একটা সমস্যা হবে না।