ধান-চাল অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে দিনাজপুর জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ। খাদ্যশস্য লাইসেন্স ব্যতীত কোনও ব্যবসায়ী এক মেট্রিক টনের অধিক খাদ্যশস্য/খাদ্য সামগ্রী রাখতে পারবে না। লাইসেন্স থাকলেও নিয়মবহির্ভূতভাবে যেসব গুদাম ও মিলে অবৈধ মজুত রয়েছে সেসব স্থানে অভিযান চালানো হবে। যেসব ব্যক্তি এসব অবৈধ মজুতের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলায় ধান-চালের অবৈধ মজুত রোধকল্পে অভিযান ও মনিটরিং জোরদার বিষয়ক সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কথা বলেন জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী। এ সময় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রক রেজাউল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজওয়ানুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেজর ও অটোমেজর হাসকিং মিল মালিক গ্রুপের সহ-সভাপতি শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন, দিনাজপুর চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন, খাদ্যশস্য আড়তদার মালিক গ্রুপের সভাপতি প্রতাপ সাহা পানু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় জানানো হয়, জেলায় লাইসেন্সভুক্ত আমদানিকারক ১২, পাইকারি ও আড়তদার ১৮৫, খুচরা ব্যবসায়ী ১৭৯, অটোমেটিক চালকল ৩৬৩, হাসকিং চালকল ১৮৯৮, খাদ্যবান্ধব ডিলার ২২৪ এবং অন্যান্য ডিলার রয়েছেন ৭৫ জন। এর বাইরেও অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যারা সরকারের খাদ্যশস্য লাইসেন্সের আওতায় আসেনি।
সভায় বলা হয়, জেলায় প্রায় ২৯৬টি হাট-বাজার আছে। জেলার মধ্যে দেশের অন্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের ধান-চাল গুদামগুলো চিহ্নিত করে লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা হবে। খাদ্যশস্য লাইসেন্স ছাড়া ধান-চাল ব্যবসা করা যাবে না। একমাসের মধ্যে সবাইকে লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ধান-চাল ব্যবসায়ীদের ব্যাংক লোনের ক্ষেত্রে খাদ্যশস্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোনও পাইকারি খাদ্যশস্য লাইসেন্সধারী ৩০ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ৩০০ মেট্রিক টন ধান/চাল এবং ২০০ মেট্রিক টন গম/গমজাত দ্রব্য মজুত করতে পারবে। খুচরা খাদ্যশস্য লাইসেন্সধারী ১৫ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ১৫ মেট্রিক টন ধান-চাল এবং ১০ মেট্রিক টন গম/গমজাত খাদ্য মজুত রাখতে পারবে। অটো রাইস মিলের লাইসেন্সধারী ৩০ দিনে সর্বোচ্চ পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার তিনগুণ ধান এবং দুইগুণ চাল মজুত রাখতে পারবে। হাসকিং মিলের লাইসেন্সধারী ৩০ দিনে সর্বোচ্চ পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতার তিনগুণ ধান এবং ১৫ দিনে সর্বোচ্চ ১০০ মেট্রিক টন চাল মজুত রাখতে পারবে। প্রতি সপ্তাহে/পাক্ষিক ধান-চালের মজুত সম্পর্কিত তথ্য নির্ভুলভাবে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতরে পাঠাতে হবে।
এ সময় মিল মালিক গ্রুপের নেতারা দাবি করেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের বাজার বৃদ্ধির যে বিষয়টি পত্র-পত্রিকায় আসে বা বিভিন্নভাবে বলা হয় সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে চাল ব্যবসায়ীরা জড়িত নন। সিন্ডিকেট অপবাদ থেকে মুক্ত হতে চায় দিনাজপুরের মিলাররা। মিল মালিকরা মজুত করে না। চালের মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে। এখানে কোনও সিন্ডিকেট নেই। তবে চালকল, আড়তদার, আমদানিকারী ও ডিলার ছাড়াও লাইসেন্সবিহীন অজস্র ব্যবসায়ী আছেন, যারা ধান, গম ও সরিষা মজুত করেন।