কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত থাকায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পানিবন্দি থাকায় বানভাসিদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।
জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, জেলার ৯ উপজেলার ৫৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার প্রায় ৩৭ হাজার ১০০ পরিবারের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। প্লাবিত হওয়ায় ৩৯৭টি বিদ্যালয়ে শ্রেণিপাঠ ও মূল্যায়ন পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে পানিবন্দি থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন দেড় লক্ষাধিক মানুষ। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকটে বানভাসিদের কষ্টের মাত্রা বর্ণনাতীত। প্লাবিত এলাকার গবাদিপশুর ভোগান্তিও চরমে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব মশালের চর গ্রামের বাসিন্দা হামিদুল বলেন, ‘পানি ধীরে ধীরে কমতাছে। অহনও গ্রামের ৬০ ভাগ ঘরের ভেতর হাঁটু সমান পানি। রান্ধন আর পানির কষ্ট। উঁচা জায়গায় রাইন্ধা আইনা খাওন লাগে।’
এই গ্রামের খানিকটা পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্রের ভাটিতে আরেকটি দ্বীপচর পশ্চিম মশালের চর গ্রাম। ভোগান্তির মাত্রা এখানে আরও বেশি। এখনও বেশিরভাগ পরিবারের ঘরে পানি।
এই গ্রামের বাসিন্দা ফারুক বলেন, ‘ঘরে ঘরে পানি। কেউ নৌকায় আবার কেউ গবাদিপশু রাখার স্থানে রান্না করে কোনও রকম দিনযাপন করছেন।’
সদরের যাত্রাপুর, হলোখানা, ঘোগাদগ ও পাঁচগাছী ইউনিয়নসহ কুড়িগ্রাম পৌরসভার ধরলা তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে পানিবন্দি পরিবারগুলো ঘরবন্দি হয়ে নিদারুণ কষ্টে রয়েছে। একই পরিস্থিতি চিলমারী, রৌমারী ও চর রাজিবপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের দুর্গত মানুষের।
পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষ নৌকায় ভাসমান জীবনযাপন করছেন। যাদের সে সামর্থ্য নেই তারা ঘরের ভেতর মাচা করে কিংবা ঘর ছেড়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। একেবারে নিরুপায় পরিবারগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে। শুকনো স্থান ও জ্বালানির অভাবে রান্না করতে পারছে না অনেক পরিবার। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে থাকায় প্লাবিত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের সঙ্গে খাদ্য কষ্টে রয়েছে গবাদিপশু। প্লাবিত এলাকায় তৃণভূমি ও খড়ের ঢিবি তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের সংস্থান নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবারগুলো। কলাপাতা কিংবা ছন দিয়ে গবাদিপশুর ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। উপরন্তু গবাদিপশুর বাসস্থান নিয়ে চলছে উৎকণ্ঠা।
শিক্ষা বিভাগ বলছে, প্লাবিত হওয়ায় জেলার ২৮১ প্রাথমিক এবং ১২১টি মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণিপাঠদান ও মূল্যায়ন পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে।
এদিকে পানিবন্দি মানুষের খাদ্যকষ্ট লাঘবে সরকারি ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন। মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলার দুর্গত মানুষদের জন্য ৫৪২ মেট্রিক টন চাল এবং ২২ হাজার ৬৯০ প্যাকেট শুকনো খাবার খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘সরকারিভাবে ত্রাণ তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি, চিকিৎসা ও স্যানিটেশনের দিকে আমরা নজর দিয়েছি। মানুষের কষ্ট লাঘব করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, জেলায় ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে দুধকুমার নদও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা পানি কমে মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এ দিন দুপুরে দেওয়া বার্তায় পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারের পানি সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।