নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় পৈতৃক ভিটায় সারা দিন সময় কাটালেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা থেকে সড়কপথে লোহাগড়া সেনাক্যাম্পে পৌঁছান তিনি। তিনি এলাকার দুই বিদ্যালয় পরিদর্শন করে মোট ৩৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন।
লোহাগড়া সেনাক্যাম্প থেকে সেনাপ্রধান প্রথমে করফা গ্রামে তাঁর পৈতৃক ভিটায় যান। সেখানে তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক শেখ মো. রোকনউদ্দীন আহমেদের নামে নির্মিতব্য ১০ শয্যার মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন ও কাজের অগ্রগতির খোঁজখবর নেন। এ সময় রাস্তার দুই পাশে শত শত মানুষ হাত নেড়ে সেনাপ্রধানকে শুভেচ্ছা জানান। পরে লোহাগড়ার মধুমতি সেনাক্যাম্পে তিনি পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পরে পাশের মল্লিকপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে যান সেনাপ্রধান। ওই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন সেনাপ্রধানের বাবা রোকনউদ্দীন আহমেদ। সেনাপ্রধানের আগমন উপলক্ষে বিদ্যালয় চত্বরে বিশাল মঞ্চ ও প্যান্ডেল করা হয়। সেখানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও এলাকার শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে এলাকাবাসীর উদ্দেশে বক্তব্যে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একাত্তর সালে যুদ্ধের সময়ে আমি এখানে ছিলাম। সেসব স্মৃতি মনে পড়ে। এলাকার প্রতি আমার প্রাণের টান আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখানকার সংসদ সদস্য ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই এলাকার প্রতি গভীর টান রয়েছে। এলাকার সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। আমরা এলাকার জন্য মিলেমিশে কাজ করছি। একদিন বুঝতে পারবেন, এ এলাকাবাসী অনেক ভাগ্যবান।’
এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন যশোর সেনানিবাসের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মাহবুবুর রশীদ, মেজর জেনারেল এ কে এম রেজাউল মজিদ, সেনাপ্রধানের বড় ভাই এস এম রফিউদ্দিন আহমেদ, বোন রুনু ইকবাল, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম মহাসীন আহমেদ, প্রধান শিক্ষক শিপ্রা রানী বিশ্বাস প্রমুখ।
সেনাপ্রধান ওই বিদ্যালয়ের জন্য ২০ লাখ টাকা অনুদান ও বিদ্যালয়ের ১০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবনের সব ব্যয়ভার বহনের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এলাকার সব ধরনের উন্নয়নের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন। এর আগে বিদ্যালয়ে তাঁর বাবার নামে ভবন ও শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন এবং বিদ্যালয় চত্বরে একটি গাছের চারা রোপণ করেন। সেখানে সেনাপ্রধানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
এরপর সেনাপ্রধান লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ও লোহাগড়া সরকারি আদর্শ মহাবিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। লোহাগড়া সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে ১৫ লাখ টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন। সেখানে একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দেন। পরে লোহাগড়া সরকারি আদর্শ বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন সেনাপ্রধান।
পরে সেনাপ্রধান মধুমতী রেলওয়ে সেতুর কাজের অগ্রগতি দেখেন এবং কালনা এলাকায় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন।