নড়াইলের লোহাগড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া যুবকের বাবাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দিঘলিয়া বাজারের দোকানপাট সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। শনিবার (১৬ জুলাই) বিকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১৫ জুলাই) বিকালে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া এলাকার এক কলেজছাত্র ধর্মকে কটূক্তি করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিক্ষুব্ধ লোকজন দিঘলিয়া বাজারে সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও দোকানপাটে হামলা চালান।
এ সময় একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও দুটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সেইসঙ্গে তিনটি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে দিঘলিয়া বাজারে ও সাহা পাড়ায় রাত ৯টা পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি চালায় পুলিশ। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, অভিযুক্ত যুবক পলাতক। ঘটনার পর তার বাবাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। এরপরও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা নিন্দনীয়। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান স্থানীয়রা।
দিঘলিয়া বাজারের পান ব্যবসায়ী গোবিন্দ সাহা বলেন, ‘উত্তেজিত জনতাকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু তারা শোনেনি। আশপাশের ও বহিরাগত লোকজন জড়ো হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে ঘরের টিনের চাল, দুটি খাট, টিভি ও আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ঘরে থাকা ৩০ হাজার টাকাও পুড়ে গেছে।’
দিঘলিয়া বাজারের ব্যবসায়ী গোবিন্দ কুন্ডু বলেন, ‘আমার মিষ্টির দোকানসহ আরও দুটি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। ঘটনায় জড়িতদের বিচার চাই আমরা।’
স্থানীয় আখড়াবাড়ি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের কোষাধ্যক্ষ সুমঙ্গল কুমার বলেন, ‘শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক মন্দিরে হামলা চালায়। আমরা তখন ঘরে লুকিয়ে ছিলাম। হামলাকারীরা চলে গেলে মন্দিরে গিয়ে দেখি বিভিন্ন জিনিসপত্র নিয়ে গেছে তারা। পাশাপাশি দিঘলিয়ার স্বপন ডাক্তারের বাড়ির মন্দির ভাঙচুর এবং দিঘলিয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে হামলাকারীরা। এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চাই আমরা।’
এদিকে, শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত। এ ঘটনায় ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া যুবকের বাবাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। হামলায় জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সেজন্য দিঘলিয়া বাজারের দোকানপাট সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। ধর্ম অবমাননার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আজগর আলী বলেন, ‘এলাকার লোকজনকে প্রশাসনের প্রতি আস্থা রেখে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। কেউ বিতর্কিত পোস্ট দিলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। হামলায় জড়িতরা গ্রেফতার হবে।’
সাহা পাড়ার দুজন শিক্ষক ও একাধিক ব্যক্তি জানান, ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া যুবক বখাটে প্রকৃতির। নেশাগ্রস্ত হয়ে এমন পোস্ট দিয়েছিল। বিষয়টি আমরা তার বাবাকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে একদল উচ্ছৃঙ্খল লোক উত্তেজনা ছড়িয়ে হামলা চালিয়েছিল। যা মেনে নেওয়া যায় না।
এ ব্যাপারে দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এলাকাবাসীকে শান্ত রাখার জন্য জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এমন ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছি আমরা।’