ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনার তীর ইজারা নিয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি নদীর প্লাবন ভূমি দখল করে অবৈধভাবে তৈরি করেছে অস্থায়ী জেটিঘাট। এই ঘাটে কার্গো জাহাজ থেকে প্রতিদিন শত শত টন খাদ্য পণ্য ক্রেনের মাধ্যমে খালাস করা হচ্ছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের ৪০০ ও ২২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুই বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এ অবস্থায় ঝুঁকি বিবেচনা করে দ্রুত অবৈধ ঘাটটি অপসারণ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছে বিআইডব্লিওটিএ ও আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে ইজারাদারের দাবি, জনস্বার্থে ইজারা শর্তের মধ্যেই ঘাটটি স্থাপন করা হয়েছে।
বিআইডব্লিটিএ, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, ইজারার নাম করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর প্রান্তে মেঘনার প্লাবন ভূমি ও তীর দখল করে অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে জেটিঘাট।
আশুগঞ্জ উপজেলা বয়লার মালিক সমিতি সভাপতি শাহজাহান সিরাজ ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য মেঘনার তীর ইজারা নিয়ে ঘাটটি তৈরি করেছেন। এই ঘাটটি নির্মাণের ফলে প্রতিদিন শত শত ট্রাক ভারী মালামাল নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের ৪০০ ও ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। এতে সড়কের নিচে থাকা পাওয়ার প্ল্যান্টের কোলিং ওয়াটার পাইপ, “র”-ওয়াটার পাইপ, ফায়ার সার্ভিস ওয়াটার পাইপ, খাবার পানির পাইপলাইন ঝুঁকিতে পড়েছে। পাশাপাশি বালু দিয়ে তৈরি সড়কটির ধুলাবালির কারণে প্ল্যান্টের এয়ার ফিল্টার জ্যাম হয়ে যেকোনও সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন।
ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পাওয়ার প্ল্যান্টের মূল্যবান যন্ত্রপাতি। দেশে বাড়তে পারে লোডশেডিংয়ের মাত্রাও। এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষার স্বার্থে চলতি মাসের ১ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ এক চিঠির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানান। পাশাপাশি ঘাটটি অন্যত্র স্থানান্তরের অনুরোধ জানিয়েছেন।
এদিকে রুবেল মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ঘাটটির গুরুত্ব রয়েছে। ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী নদী পথে আমদানি করা হলে নদীর তীর পণ্য রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। এ ছাড়া পরিবহনের মাধ্যমে এলাকাবাসীর কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটটি অপসারণ করা হলে স্থানীয় ব্যবসায়ী বিপাকে পড়বেন।
এদিকে ইজারাদার শাহজাহান সিরাজ জানান, জনস্বার্থে ইজারা বিধি মেনেই ঘাটটি তৈরি করা হয়েছে।
তার দাবি, ঘাটটি নির্মাণের পর থেকে ভৈরব-আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের বিআইডব্লিওটিএ কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আমার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছেন। সরকার পরিবর্তন হয়েছে, এখনও পূর্বের অবস্থা কোথাও কোথাও রয়ে গেছে। এত টাকা কোথা থেকে দেবো। চাঁদা না পেয়ে তিনি এসব করছেন।
শাহজাহান সিরাজ বলেন, সরকার না চাইলে আমি ঘাটটি সরিয়ে নেবো। সেই সঙ্গে আমি ক্ষতিপূরণ দাবি করবো। কারণ অর্থের বিনিময়ে আমি ঘাটটি ইজারা নিয়েছি। অন্যথায় আমি আইনের আশ্রয় নেবো।
এদিকে মেঘনার তীর এবং প্লাবন ভূমি দখল একাধিক স্থানে ঘাট নির্মাণ করায় বিআইডব্লিওটিএর ইজারা বিধি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন ‘তরী’ বাংলাদেশের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ। তিনি জানান, বিআইডব্লিওটিএ কর্মকর্তাদের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে নদীর তীর দখল হচ্ছে। নদীর প্লাবন ভূমি দখল হচ্ছে। তারা বিষয়গুলো জেনেও অনেকটা নীরব। এ বিষয় নিয়ে তিনি জেলা নদী রক্ষা কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করবেন। পাশাপাশি নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করবেন।
অপরদিকে আশুগঞ্জ-ভৈরব নদী বন্দরের উপ-পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা) মহিউদ্দিন খান দাবি করেন, ‘নদীর তীর আমরা ইজারা দিয়েছি। ঘাট তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ইজারার শর্ত ভঙ্গ করায় ঘাটটি অপসারণের জন্য জেলা প্রশাসক, আশুগঞ্জ থানা ও ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘দ্রুত ঘাটটি অবৈধ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
ইজারার নাম করে আশুগঞ্জ-ভৈরব সেতু এলাকার আশুগঞ্জ প্রান্তে কমপক্ষে ২০টি স্থানে অবৈধভাবে ঘাট তৈরি করা হয়েছে। এসব ঘাট থেকে প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকা ইজারা আদায় করা হচ্ছে।