নভেম্বরে উৎপাদনে যাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার’ প্রকল্প
বাংলাদেশ

নভেম্বরে উৎপাদনে যাবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার’ প্রকল্প

আগামী নভেম্বরের শেষের দিকে পানি সরবরাহ শুরু করবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার’ প্রকল্প। গত এক সপ্তাহ ধরে এই প্রকল্পে কমিশনিংয়ের (ট্রায়াল রান) কাজ চলছে; যা শেষ হতে একমাস সময় লাগবে। এমনটাই জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের অধীনে পানি সরবরাহ প্রকল্পে ১৩০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন লাইন রয়েছে। বর্তমানে পাইপগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। কোথাও কোনও লিকেজ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী নভেম্বর মাসের শেষের দিক থেকে পানি সরবরাহ শুরু হবে। এজন্য পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে।

প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, এ প্রকল্প থেকে দৈনিক ৬ লাখ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা যাবে। এখান থেকে জেলার বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, পটিয়া উপজেলা এবং কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না অর্থনৈতিক অঞ্চল, সিইউএফএল এবং কাফকো শিল্পাঞ্চলে পানি সরবরাহের কথা রয়েছে। ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকায় শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হয়েছে ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকায়। ওয়াসার অন্যান্য প্রকল্পের মতো এ প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে।

ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রকল্পটি শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে কমিশনিং (ট্রায়াল রান) চলছে। ট্রায়াল রান শেষ করতে এক মাস সময় লাগবে। নভেম্বরের শেষের দিকে এ প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি। এ প্রকল্প চালু হলে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন উপজেলা আনোয়ারা, বোয়ালখালী ও কর্ণফুলী উপজেলার ১০ হাজার আবাসিক গ্রাহকের মাঝে পানির সংযোগ দেওয়া হবে। এ প্রকল্প থেকে শিল্পাঞ্চলে ৮০ ভাগ এবং আবাসিকের গ্রাহকদের জন্য ২০ ভাগ পানি সরবরাহ করা হবে।’

এ প্রকল্পের মাধ্যমে ছোট-বড় ১৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাণিজ্যিক সংযোগ দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানে দৈনিক ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট আছে। এ ছাড়া আবাসিক গ্রাহকদের মাঝে দেওয়া হবে ২ কোটি লিটার পানি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহের জন্য পটিয়া বাইপাস এলাকায় ৫ একর জায়গায় এবং আনোয়ারার দৌলতপুর মৌজায় ২ দশমিক ৯৪ একর জায়গায় দুটি জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে বসানো হয়েছে ১১৩ কিলোমিটার পাইপ লাইন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে আগামী নভেম্বরে পানি সরবরাহের টার্গেট আছে। এ লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলমান আছে। এ প্রকল্পের অধীনে পানি সরবরাহের জন্য কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকোসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চল এবং ৯০০ জন আবাসিকের গ্রাহক সংযোগ পেতে আবেদন করেছিলেন। ইতোমধ্যে আমরা ৬০০ গ্রাহককে সংযোগ পৌঁছে দিয়েছি। বাকি গ্রাহকের সংযোগ দেওয়ার কাজ চলমান আছে। আমরা চেষ্টা করছি, প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করে আগামী মাসের মধ্যে পানি সরবরাহ শুরু করতে।’ 

প্রকল্পের অবস্থান

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যবর্তী জ্যৈষ্ঠপুরার ভান্ডালজুড়ি পাহাড়ি এলাকায় ৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গায় জুড়ে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পটি। এ প্রকল্প থেকে দৈনিক ৬ লাখ কোটি লিটার পানি সরবরাহ পাওয়া যাবে। এ প্রকল্প থেকে শুধু মাত্র চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প কারখানা এবং আবাসিক এলাকায় পানি সরবরাহ করা হবে। 

প্রকল্পের তথ্য

২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পটি। তখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৩৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে প্রকল্পের শুরুতে ভূমি নিয়ে জটিলতায় পড়তে হয় ওয়াসাকে। এজন্য তিন বছর আটকে পড়ে প্রকল্পটি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় নির্মাণকাজ। 

২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রথম সংশোধিত আকারে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। প্রকল্পের ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশ সরকার দিয়েছে ১ হাজার ১৫০ কোটি ৬৫ লাখ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে ২০ কোটি টাকা।

Source link

Related posts

রিংয়ে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন জীবন

News Desk

আরো এক সপ্তাহ বাড়লো লকডাউন

News Desk

বেড়েছে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচের দাম, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ  

News Desk

Leave a Comment