নাটোরের বাগানে আরবের খেজুর
বাংলাদেশ

নাটোরের বাগানে আরবের খেজুর

নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী ও দিঘাপতিয়া ইউনিয়নে দুই কৃষি উদ্যোক্তার বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে সৌদি আরবের খেজুর। ইতোমধ্যেই দুটি বাগানের ৮৬ গাছে খেজুর ধরেছে। গত ২৫ জুলাই থেকে ফল সংগ্রহ শুরু হয়েছে।

নাটোর শহরের মাছ ব্যবসায়ী ও কৃষি উদ্যোক্তা গোলাম নবী জানান, ২০১৮ সালে সৌদি আরব ও ভারত থেকে প্রায় ১০ প্রজাতির ২০০ সৌদি আরবের খেজুরের চারা সংগ্রহ করেন তিনি। চারাগুলো ছাতনী ইউনিয়নের মাঝদিঘা এলাকায় প্রায় ছয় বিঘা জমিতে রোপণ শেষে পরিচর্যা করতে থাকেন। এরপর গাছের গোড়ায় নতুন চারা গজালে সেগুলোও রোপণ করেন। বর্তমানে তার বাগানে তিন বছরের অধিক বয়সী ১০০টির বেশি খেজুর গাছ রয়েছে। এ ছাড়া তিন ও আড়াই বছরের গাছও আছে। সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় বছরে গাছে ফল আসার কথা থাকলেও তার আগেই গত বছর কয়েকটি গাছে খেজুর আসে। এ বছর প্রায় ৮০টি গাছে খেজুর এসেছে। আগামী বছর সব গাছে ফল আসবে বলে দাবি গোলাম নবীর। একটি পরিণত গাছ ৫০-৬০ বছর ধরে ফল দেয় বলেও জানান তিনি।

সরেজমিন বাগানে দেখা গেছে, গাছে গাছে থোকায় থোকায় খেজুর ঝুলছে। গোলাম নবী ছাড়াও কয়েক জন শ্রমিক বাগান পরিচর্যা করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম নবী জানান, আজুয়া, বারহী, শিশির, সুককাইসহ ১০ প্রজাতির ৮০টি গাছে পাঁচ-ছয়টি করে থোকা এসেছে। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-২০ কেজি পর্যন্ত খেজুর পাওয়া যাবে। গত ২৫ জুলাই থেকে ফল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত এক হাজার কেজি সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতি কেজি খেজুরের বাজার দর ৩০০ টাকা।

তিনি বলেন, ‘গত বছর যে ১০-১৫টি গাছে খেজুর এসেছিল, সেগুলোর স্বাদ ছিল সৌদি আরবে চাষকৃত খেজুরের মতোই।’

একেকটি পরিণত গাছে ১৫ থেকে ৩০টি পর্যন্ত থোকা আসে অপরদিকে, নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুর এলাকার ‘রাজধানী থাই অ্যালুমিনিয়াম’-এর স্বত্বাধিকারী মোবারক হোসেন জানান, তার বাবা-মা বীজ থেকে খেজুরের চারা তৈরি করেন। এক বছরের পরিচর্যায় চারাগুলো রোপণের উপযোগী হয়। পরে নিজ গ্রাম করোটায় দুই বিঘা জমিতে ৬০০ চারা রোপণ করেন তিনি।

সরেজমিন ওই বাগানে দেখা যায়, ছয়টি গাছে খেজুর এসেছে। কোনও গাছে তিনটি, কোনও গাছে দুটি আবার কোনও গাছে একটি থোকা। তবে গাছগুলো বেশ ঘন করে লাগানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবারক বলেন, ‘প্রথমে চারাগাছগুলো ঘন করে লাগানো হলেও এখন পুরুষ গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। সঠিক দূরত্ব (১২-১৫ ফুট) রাখতে কিছু গাছ তুলে অন্য জমিতে লাগানো হচ্ছে। গত সাড়ে তিন বছরে প্রায় ১১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’

অনেক গাছে আগেভাগেই খেজুর ধরেছে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সাধারণত একেকটি পরিণত গাছে ১৫ থেকে ৩০টি পর্যন্ত থোকা আসে। প্রতি থোকায় ৪ থেকে ৮ কেজি খেজুর পাওয়া সম্ভব। এ বছর ছয়টি গাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ কেজি ফল সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর ফিরোজ বলেন, ‘আমরা ওই দুই বাগান পরিচর্যাসহ সব বিষয়ে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। গাছগুলোতে প্রতি বছর ফল আসে কিনা তাও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ওই দুই বাগানের উদ্যোক্তা সফলতা পেলে অনেকে সৌদি আরবের খেজুর চাষে উদ্যোগী হবেন। এতে উদ্যোক্তাদের লাভবান হওয়ার পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান হবে। কমে আসবে খেজুর আমদানির পরিমাণ।’

Source link

Related posts

ডিম ছাড়ছে মা, মাঝরাতে হালদার বুকে চলছে উৎসব

News Desk

ফুঁসে উঠেছে কুশিয়ারা, ডুবেছে হবিগঞ্জের নিম্নাঞ্চল 

News Desk

নবীগঞ্জে জুয়া খেলার সামগ্রীসহ এক জন আটক

News Desk

Leave a Comment