নাফনদ যেন সীমান্তের বাসিন্দাদের ‘রক্ষাকবচ’
বাংলাদেশ

নাফনদ যেন সীমান্তের বাসিন্দাদের ‘রক্ষাকবচ’

কক্সবাজারের টেকনাফ কোলঘেঁষে বয়ে গেছে নাফ নদ; যা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে ভাগ করেছে। গত কয়েকদিন ধরে নাফনদের ওপাড়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। এতে প্রাণে বাঁচতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত রবিবার (১৪ জুলাই) বিকালেও নাফনদ দিয়ে টেকনাফে প্রবেশকালে বিজিপি সদস্যদের বহনকারী দুটি নৌকা ফেরত পাঠিয়েছে কোস্ট গার্ড।

এদিকে সোমবার (১৫ জুলাই) সকাল থেকে পৌরসভার জালিয়া পাড়াস্থল টেকনাফ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটের ওপাড়ে মর্টারশেল-আগুনের ধোঁয়া দেখা গেছে। এছাড়া ওপাড়ের টানা মুহুর্মুহু একাধিক গোলার বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এপাড়ের সীমান্তে মানুষের ঘরবাড়ি।

মিয়ানমারের আগুনের দিকে তাকিয়ে হতাশা নিয়ে আতঙ্কের কথা বললেন সীমান্তের পৌরসভার জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী নুর হোসেন। নাফনদ ঘিরে এখানকার বাসিন্দাদের জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। নাফ ঘিরে যেমন রয়েছে সুখস্মৃতি, তেমনই আছে নানা কষ্টের দিনলিপিও।

নুর হেসেন বলেন, ‘দুই দিন ধরে নাফের ওপার থেকে যেভাবে বিকট গোলার শব্দ পাচ্ছি, এর আগে কখনও এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি। রাতে কানের ওপর বালিশ চাপা দিয়ে ঘুমাতে হয়। স্থলসীমানা হলে এতক্ষণ ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হতো। অনেক হতাহতের ঘটনাও হয়তো ঘটতো। এই নাফনদ আমাদের সীমান্তবর্তী বসবাসকারী মানুষকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে। নাফ নদ পেরিয়ে ওপারের গোলা এখনও এখানে এসে পড়েনি। যদি বান্দরবানের তুমব্রু, ঘুমধুমের মতো স্থলসীমানা থাকলে এমন সময়ে জন্মভিটা ছেড়ে অন্যত্রে চলে না গিয়ে উপায় ছিল না। 

স্থানীয়রা জানায়, সোমবার সকাল থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলমান। এরফলে টেকনাফের নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, সদরের নাজিরপাড়া ও সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপের ওপাড়ে আশিক্কা পাড়া, সুদাপাড়া, পাতংজা, হারিপাড়া, বাইন্ন্যাপাড়া, সিকদার এবং পেরাংপুলে মগ্নিপাড়া থেকেও ধোঁয়া দেখা গেছে।

নাফনদেই রক্ষা, মনে করছেন এপাড়ের বাসিন্দারা

টেকনাফ সীমান্তে বসবাসকারী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওপারে টানা দুইদিন চলমান যুদ্ধে এপারে সীমান্ত মানুষের আতঙ্ক বাড়ছে। সকালেও মিয়ানমারের রাতভর যুদ্ধ বিমানের হামলা চলছে। যার কারণে আমাদের বাড়িঘরের দরজা-জানালা কাঁপছে। এসময় ভয়ে আমরা পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। এমন বিকট শব্দ আগে কখনও শুনিনি। এ সীমান্তের নাফনদ না থাকলে আমাদের কী হতো, তা মনে করলেও শরীর কেঁপে ওঠে।’ 

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল এবং ইয়াবা কারবারের কারণে নাফ নদে মাছ ধরার ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। এ বিষয়ে সীমান্তের টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এক সময় মাদকের ভয়াবহতার কারণে অনেক সময় নাফনদের উপর রাগ হতো। হয়তো এ নাফনদ না থাকলে টেকনাফ মাদকের রুট হিসেবে পরিচিত লাভ করতো না। কিন্তু মিয়ানমার চলমান যুদ্ধে আমাদের এই সীমান্তে নাফনদ জলপথ না থাকলে কী ভয়াবহ পরিণতি হতো, তা এখন অনুভব করছি।’

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে সীমান্তের বাসিন্দাদের

তিনি বলেন, ‘গত দুদিন ধরে মিয়ানমারের যুদ্ধ তীব্রতা বেড়েছে। যার কারণে মিয়ানমারে বোমার শব্দে এপাড় সীমান্ত মানুষের বাড়িঘর কাঁপছে।’

জেটিঘাট এলাকার মো. কাদের বলেন, গত দুদিন ধরে মর্টার শেলের শব্দে সীমান্ত এলাকা কাঁপছে। যে বিকট শব্দ হয় মাঝে মাঝে মনে হয়, গুলি বা মর্টার শেল এখানে এসে পড়বে। ভয়ে আমরা বড়শি নিয়ে মাছ শিকারে জেটি ঘাটে যাচ্ছি না।’

টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবির টহল জোরদার রয়েছে। সকালে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির খবর শুনেছি। কোনও অনুপ্রবেশকারীদের আমরা ঢুকতে দেবো না।’

Source link

Related posts

ঈদের পর প্রাণ ফিরেছে কক্সবাজার সৈকতে

News Desk

‘সাহেব আর নেই, মনটারে বুঝাইতে পারতেছি না’

News Desk

দন্ত চিকিৎসককে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা

News Desk

Leave a Comment