সংসারে অভাব–অনটনের কারণে ঠিকমতো খাবার জুটতো না। জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়। এদিক-সেদিক দীর্ঘদিন ঘুরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে হয়ে যান চিত্রনায়িকার গাড়িচালক। তিন বছর পর সেখান থেকে মামার হাত ধরে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরপর নিজের অতীত ভুলে যান। গত ২০ বছরে অনিয়ম-দুর্নীতি করে ৪০০ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
আলোচিত এই ব্যক্তির নাম জাহাঙ্গীর আলম। নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের নাহারখিল গ্রামের মৃত রহমত উল্লাহর ছেলে। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে জাহাঙ্গীর দ্বিতীয়। বিয়ে করেছেন দুটি। প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক সন্তান আর দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তিন সন্তান রয়েছে। প্রথম স্ত্রী দেশে আছেন, তবে তার সঙ্গে জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ নেই। দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন।
ঢাকায় আলিশান বাড়ি ও প্লট-ফ্ল্যাট
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে অন্তত ২০ কোটি টাকার জমি কিনেছেন নিজের এলাকায়। ঢাকায় রয়েছে পাঁচটি প্লট-ফ্ল্যাট। নিজের নামে আড়াই কোটি ও স্ত্রীর নামে ব্যাংকে আছে সোয়া কোটি টাকা। ডিপিএস আছে পৌনে তিন লাখ টাকার, এফিডিআর আছে সোয়া এক কোটি টাকার। স্ত্রীর নামে কিনেছেন দামি গাড়ি। বিভিন্ন কোম্পানিতে আছে কোটি টাকার শেয়ার। একটি অংশীদারি প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ছয় কোটি টাকার বিনিয়োগ। স্ত্রী, শাশুড়ি, ভাই ও ভাগিনার নামে আছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
এর মধ্যে ধানমন্ডিতে নিজের নামে একটি ফ্ল্যাট, একই স্থানে স্ত্রী-শাশুড়ির নামে কিনেছেন ৫৫০০ বর্গফুটের আরেকটি ফ্ল্যাট। মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেট এলাকায় রয়েছে চারটি দোকান। মিরপুরে সাততলা আলিশান বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট। মাইজদী শহরের হরিনারায়ণপুরে যারিয়াত ভিলা নামে আছে আটতলা রাজকীয় বাড়ি, নিজ গ্রাম নাহারখিলে রয়েছে ক্ষণিকের নীড় নামে চারতলা আলিশান বাড়ি। এই বাড়ির সামনে দুই কোটি টাকা খরচ করে বাবার নামে গড়ে তুলেছেন মসজিদ। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আছে বিশাল অ্যাগ্রো খামার। সুবর্ণচর উপজেলায় রয়েছে দুটি খামার।
স্থানীয় সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীর আলম প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেও পরিচয় দিতেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী। এই পরিচয় ব্যবহার করে নিয়মিত সচিবালয়ে তদবির বাণিজ্য করতেন। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছে নানা তদবির করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। একই পরিচয় ব্যবহার করে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদও বাগিয়ে ছিলেন। নোয়াখালী-১ সংসদীয় আসনে নিজের একটি রাজনৈতিক বলয় তৈরি করেছেন। তদবির, টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করেছেন। গাজীপুরের ইপিজেড এলাকার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। চট্টগ্রাম বন্দরেও ছিল আধিপত্য। কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। হেলিকপ্টার ছাড়া চলতেন না। রেখেছেন একাধিক বডিগার্ড।
এলাকায় গড়ে তুলেছেন ‘মামা বাহিনী’
নিজের এক ভাইকে বানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। ভাগিনাকে দিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেছেন ‘মামা বাহিনী’। স্বপ্ন দেখেছেন সংসদ সদস্য হওয়ার। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নোয়াখালী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। কিন্তু এটি কাল হয়ে দাঁড়াবে, বুঝতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচয় ব্যবহার করে প্রশাসন দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এইচ এম ইব্রাহীমের অনুসারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। পরে ইব্রাহীম প্রধানমন্ত্রীকে জানালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে গত ২৩ ডিসেম্বর একটি বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নিজেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করে বেড়াচ্ছেন। তার সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে নিকটস্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নিন।’
এ অবস্থায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। রবিবার বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তার বাসার সাবেক এক পিয়নের অর্থসম্পদের বিষয়টি সামনে আনেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। বাস্তব কথা। কী করে বানালো এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরই জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেইসঙ্গে তাদের হিসাব খোলার ফরমসহ যাবতীয় তথ্য আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে। রবিবার বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সব ব্যাংকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সব ধরনের তদবির বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন জাহাঙ্গীর। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী পরিচয়ে তদবির বাণিজ্য করতেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের হুমকি দিয়ে স্বার্থ হাসিল করতেন। সচিবালয়ে বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ, টেন্ডার পাইয়ে দেওয়াসহ সব তদবির করতেন। এসব তদবিরের বিপরীতে মোটা অংকের কমিশন নিতেন। নিজের বড় ভাইকে বানিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। আরেক ভাইকে বানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ভাগিনা মাকছুদুর রহমান শিপনকে বানিয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য। রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গড়েছেন বাহিনী।
নাহারখিলের বাড়িতে থাকেন বড় ভাই
সোমবার দুপুরে জাহাঙ্গীরের নাহারখিলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, চারতলা বাড়ির তিনতলা পর্যন্ত ফাঁকা পড়ে আছে। নিচতলায় তার বড় ভাই মীর হোসেন ও স্ত্রীকে পাওয়া যায়। অন্য কেউ বাড়িতে নেই।
ভাইবোনদের বর্তমান অবস্থা জানিয়ে মীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের আট ভাইবোনের মধ্যে জাহাঙ্গীর দ্বিতীয়। একসময় দুবাই ও সৌদি আরবে ছিলাম আমি। বিদেশে কাটিয়েছি ২০ বছর। বর্তমানে এই বাড়িতে থাকি। এটি জাহাঙ্গীরের বাড়ি। খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে আছি। তৃতীয় ভাই আলমগীর হোসেন খিলপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। চতুর্থ ভাই ফেয়ার হোসেন সপরিবারে সুইডেনে থাকে। ছোট ভাই মনির হোসেন ঢাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য করে। বোনদের বিয়ে দিয়েছি। সবাই শ্বশুরবাড়িতে থাকে। তাদের সন্তানরা বড় হয়েছে। পড়াশোনা করছে। সবাই ভালো আছে।’
আমার বাবা ইউনিয়ন পরিষদের কেরানি ছিলেন উল্লেখ করে মীর হোসেন বলেন, ‘১৮ বছর সেখানে কাজ করেছেন তিনি। তারপর আবুধাবির বিমানবন্দরে কাজ করেছেন ২০ বছর। কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।’
যেভাবে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী হলেন
মীর হোসেন বলেন, ‘একসময় আমাদের সংসারে অভাব–অনটন ছিল। বড় পরিবার হওয়ায় বাবার আয়ে ঠিকমতো খাবার জুটতো না। অর্থের অভাবে জাহাঙ্গীর বেশি দূর পড়ালেখা করতে পারেনি। মাধ্যমিকের গণ্ডিও পার করতে পারেনি। ফলে জীবিকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে জাহাঙ্গীর চলে যায় ঢাকায়। এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ১৯৮৪ সালের দিকে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা দোয়েলের ব্যক্তিগত গাড়িচালক হিসেবে কাজ নেয়। ওই সময় আমার মামা আবুল কাশেম পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চাকরি করতেন। তখন শেখ হাসিনার সঙ্গে মামার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর কথা বলে চিত্রনায়িকার কাছ থেকে জাহাঙ্গীরকে এনে ১৯৮৮ সালের শেষের দিকে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত কর্মচারী হিসেবে কাজ দেন মামা। সেখানে কাজ করতে করতে শেখ হাসিনার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। অনেকটা তার পারিবারিক সদস্যের মতো ছিল। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সব রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতো সে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় মানবঢাল তৈরি করে বিরোধীদলীয় নেত্রীর জীবন রক্ষা করেছিল জাহাঙ্গীর তার সহযোগীরা। এরপর শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। আমরা এতদিন জানতাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার খুবই ভালো সম্পর্ক। তার কার্যালয়ে আসা-যাওয়া আছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে তার বিষয়ে কথা বললে লজ্জিত ও হতভম্ব হয়ে পড়ি। কী থেকে কী হলো, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না’ বলে কেঁদে ফেলেন মীর।
মীর হোসেন আরও বলেন, ‘জাহাঙ্গীর দুই বিয়ে করেছে। তবে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ নেই। দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। রবিবার রাতে তার কাছে (যুক্তরাষ্ট্রে) চলে গেছে জাহাঙ্গীর। এলাকায় আসলে গরিব-অসহায় মানুষকে দুই হাত ভরে দান করতো। কমবেশি সবার উপকার করেছে সবসময়।’
সম্পদ দেখে অবাক এলাকাবাসী
নাহারখিল গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীরের এক প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরিবারটি ছিল খুবই দরিদ্র। গত কয়েক বছরে জাহাঙ্গীরের বদৌলতে পরিবারের সদস্যরা কোটিপতি হয়ে গেছেন। এত সম্পদ ও আলিশান বাড়ি দেখে আমরা অবাক হয়েছি। মানুষের কাছে শুনতাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের লোক। কীভাবে এত সম্পদ বানিয়েছেন, জানি না। এলাকায় মাঝেমধ্যে আসতেন। জাহাঙ্গীরের সঙ্গে সবসময় পিস্তলসহ বডিগার্ড থাকতে দেখেছি। তবে এলাকার কারও কোনও ক্ষতি করেননি কখনও।’
জাহাঙ্গীরের সহকারী শিপনের নেতৃত্বে মামা বাহিনী
একই গ্রামের আরেক বাসিন্দা ও স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, ‘জাহাঙ্গীরের প্রভাব দেখিয়ে ভাগিনা শিপন ও তার সহকারী স্বপন কোটিপতি হয়েছেন। শিপনের কিশোর গ্যাংয়ের নাম মামা বাহিনী। গ্যাংয়ের সদস্যরা বিভিন্ন সময় কারণে-অকারণে মানুষের ওপর নির্যাতন চালায়। ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। শিপন সবসময় মদ্যপ অবস্থায় থাকেন। জাহাঙ্গীরের নাম ব্যবহার করে তার সহকারী স্বপন জেলার বিভিন্ন দফতরে তদবির বাণিজ্য করেন। কাজ না হলে হুমকি দিয়ে আদায় করেন। শিপন আর স্বপনের কাছে ব্যবসায়ীরা জিম্মি।’
নাহারখিল গ্রামের সাধুরখিল বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বিশেষ সহকারী পরিচয় দিয়ে জেলার নেতাদের সবসময় চাপে রাখতেন। তাদের থেকে কমিটিসহ বিভিন্ন তদবির করে কোটি টাকা কমিশন নিতেন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিয়ে অনেক অবৈধ কাজও করিয়েছেন। নিজ এলাকায় সরকারি অনেক সড়ক ও প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। তার কাছে সবাই ছিল জিম্মি।’
হরিনারায়ণপুরে রাজকীয় আটতলা বাড়ি
নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হরিনারায়ণপুরে গিয়ে দেখা যায়, মাইজদী প্রধান সড়ক থেকে স্টেশন সড়কে যেতে হাতের ডান পাশে দেখা যাচ্ছে নজরকাড়া আটতলা বাড়ি। ১ নম্বর রোডে ১১০ নম্বর বাড়িটির নাম যারিয়াত ভিলা। এটি মালিক জাহাঙ্গীর। বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে বিশাল পার্কিং। অত্যাধুনিক লিফট আর স্বয়ংক্রিয় জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে বাড়িতে। ফ্লোরের টাইলস থেকে শুরু করে দরজা-জানালা সব কিছুই উন্নতমানের। স্যানিটেশন ও প্লাম্বিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক সরঞ্জাম। বাড়িটির দেখভালের দায়িত্বে আছেন তত্ত্বাবধায়ক মো. আমিনুল ইসলাম।
বাড়িটির মালিকের নাম জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি জাহাঙ্গীর সাহেবের বাড়ি। আটতলার বাড়িটিতে ১৯টি ফ্ল্যাট আছে। নিচতলা গাড়ি পার্কিংয়ের কাজে ব্যবহার হয়। ১৯ ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৮টি বিভিন্ন জনের কাছে ভাড়া দেওয়া। তিনতলায় একটি ফ্ল্যাট নিজের থাকার জন্য রেখেছেন জাহাঙ্গীর। সেখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মাঝেমধ্যে থাকতেন। সর্বশেষ আড়াই মাস আগে এই বাসায় এসেছিলেন। এরপর আর আসেননি।’
গত ছয় বছর ধরে বাসা ভাড়া ও সার্বিক বিষয় দেখাশোনার কাজ একাই করছি উল্লেখ করে আমিনুল আরও বলেন, ‘বাসা ভাড়া বাবদ ১৮ জন ভাড়াটিয়া থেকে প্রতি মাসে অন্তত দুই লাখ টাকা পাওয়া যায়। জাহাঙ্গীর আলমের এক আত্মীয় এসে ভাড়ার টাকা নিয়ে যান। আমাকে মাসিক বেতন দিয়ে রেখেছেন।’
পালিয়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে
এদিকে, আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই রবিবার রাতে জাহাঙ্গীর আলম যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছেন। সোমবার বিকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তার বড় ভাই মীর হোসেন।
জেলার একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে সব কিছু বলে দেওয়ায় জাহাঙ্গীর বুঝতে পেরেছেন যেকোনও সময় তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে। এজন্য যেভাবেই হোক যেকোনও উপায়ে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়তো বিদেশে চলে গেছেন।
এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। মোবাইলে এসএমএস ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিলেও কোনও উত্তর দেননি।
কোনও মন্তব্য করতে চাননি স্থানীয় এমপি
জাহাঙ্গীরের যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী-১ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সত্য নাকি মিথ্যা, তা জানি না।’
তার এত সম্পদের কথা জানতেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এমপি ইব্রাহীম বলেন, ‘আসলে এত সম্পদের কথা জানতাম না। প্রধানমন্ত্রী তো সংবাদ সম্মেলনে সব কিছু বলেই দিয়েছেন। কারণ নেত্রীর কাছে সবার সব তথ্য আছে। দুর্নীতি করলে কারও পার পাওয়ার সুযোগ নেই। এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেলেন ৪০০ কোটির পিয়ন
আরও পড়ুন: কে এই ৪০০ কোটি টাকার পিয়ন?