নারায়ণগঞ্জের পাঁচ রুটে ছোট লঞ্চ চলাচল শুরু
বাংলাদেশ

নারায়ণগঞ্জের পাঁচ রুটে ছোট লঞ্চ চলাচল শুরু

দীর্ঘ এক মাস পর নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচটি রুটে ১৮টি ছোট লঞ্চ চলাচল শুরু করেছে। রবিবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া লঞ্চ চালুর অনুমতি দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এতে যাত্রীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তবে সব লঞ্চ চলাচলের অনুমতি না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা।

জানা যায়, ২০ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ রূপসী-৯ এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম.এল আফসার উদ্দিন ডুবে ১০ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়াতে নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ। তবে একটি সি-ট্রাক ও ঢাকা থেকে আগত দুটি লঞ্চ চালু করা হয়। কিন্তু এ জেলার ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল।

এদিকে লঞ্চ চলাচল শুরুর প্রথমদিনে সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ টার্মিনালে এসে পৌঁছায় এমএল তাপদার নামে লঞ্চটি। নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর রুটে চলাচলকারী এই লঞ্চটি পৌঁছাতেই যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়। এ সময় যাত্রীরা লঞ্চ চালুর বিষয়কে সাধুবাদ জানান। একইসঙ্গে নিরাপত্তার দিকে আরও নজর দেওয়ার অনুরোধ করেছেন যাত্রীরা।

এ সময় রফিকুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘এই রুটে লঞ্চ চালু হওয়ায় বেশ সুবিধে হয়েছে। এখন আর সড়ক পথে যাতায়াত করতে হবে না। সড়ক পথে অনেক যানজট। তাছাড়া ঈদের আগে সড়কের যানজট আরও বাড়বে।’

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী যাত্রী হাসিনা পারভীন বলেন, ‘রোজা রেখে সড়ক পথে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর। তবুও আসতে হয়। কিন্তু এখন লঞ্চ চালু হওয়ায় আর কষ্ট করে সড়কপথে যানজট ঠেলে আসতে হবে না। এখন কিছুটা আরামে আসা-যাওয়া করা যাবে। তবে লঞ্চগুলোর নিরাপত্তার দিকে আরও নজর দেওয়া দরকার।’

এমএল তাপদার নামে লঞ্চটির চালক নবী হোসেন বলেন, লঞ্চ চালু হওয়ায় আমরা খুশি। এতদিন অনেক কষ্ট করেছি। সামনে ঈদ আসছে, খরচ বেড়েছে। লঞ্চ চালু না হলে বিপদ বাড়তো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-রামচন্দ্রপুর, নারায়ণগঞ্জ-নড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ-মতলব, এই পাঁচ রুটে মাত্র ১৮টি লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেখানে মোট লঞ্চের সংখ্যা ৭০টি। সে হিসেবে এখনও শত শত শ্রমিক বেকার অবস্থায় রয়েছে। এতে করে বাকি লঞ্চের মালিক-শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 

এদিকে সব লঞ্চের অনুমতি না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের সভাপতি মো. বদিউজ্জামান বাদল। তিনি বলেন, ‘৭০টি লঞ্চের মধ্যে মাত্র ১৮টি লঞ্চ চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে একটা বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। কেউ খাবে, কেউ খাবে না, এটা হতে পারে না। সব লঞ্চ মালিক-শ্রমিকদের কথা আমাদের চিন্তা করতে হয়। এসব ঝামেলার কারণে অনেক লঞ্চ মালিক তাদের লঞ্চ বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ১০টি লঞ্চ বিক্রি হয়েছে।

তবে বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ-পরিচালক  (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের পাঁচ রুটে মোট ১৮টি লঞ্চ চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সকাল থেকে লঞ্চ চলাচল করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনুমতি দেওয়া লঞ্চগুলোকে এক বছরের মধ্যে আপার ডেক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর বাকি লঞ্চের অনুমতি দেওয়া হয়নি।’

বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মাসুদ কামাল বলেন, আজ থেকে নারায়ণগঞ্জের লঞ্চ চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অফিসে এসে বিস্তারিত বলতে পারবো।

এর আগে, গত বুধবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ছোট লঞ্চ চলাচলের বিষয়ে টার্মিনাল পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।

Source link

Related posts

যমুনার পানিতে তলাচ্ছে ফসলি জমি, ভাঙছে ঘরবাড়ি

News Desk

ভেড়ার মাংসে পাওয়া গেছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট: গবেষণা

News Desk

পাহাড়ে বেড়েছে বসতি, মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে সাড়ে ছয় হাজার পরিবারের বাস

News Desk

Leave a Comment