নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা আধাবেলা হরতালের সমর্থনে নারায়ণগঞ্জে বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিলে পুলিশের হামলার অভিযোগ উঠেছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার (২৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টায় শহরের চাষাঢ়া গোল চত্বরের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশের বাধার মুখে কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন বাম জোটের নেতৃবৃন্দরা।
ভোজ্যতেল, চাল ও ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে হরতাল ডেকেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
জানা গেছে, সকাল পৌনে ৬টায় জোটের নেতা-কর্মীরা নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নম্বর রেলগেইট এলাকা থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি একাধিকবার শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে সকাল ৭টার দিকে চাষাঢ়া বিজয়স্তম্ভের সামনে পুলিশ হরতালের মিছিলে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে আবারও নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় আসেন। সেখানেও পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ ও বাম নেতাকর্মীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
বাম গণতান্ত্রিক জোট নারায়ণগঞ্জে জেলার সমন্বয়ক নিখিল দাস অভিযোগ করে বলেন, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা হরতাল পালন করে আসছি। তবে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়ে হামলা চালিয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টায় চাষাঢ়া গোল চত্বরে পুলিশ হামলা চালিয়ে নারীসহ ১৪-১৫ জন নেতাকর্মীকে আহত করেছে। তাদের মধ্যে তিন জন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়া একজন নারী কর্মীর চুল ধরে টান দিয়ে মারধর করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের এসব হামলা ও বাধা সত্ত্বেও আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, প্রথমে পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ হরতালে বাধা দেয়। পরে তারা পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালায়। লাঠি ও বাঁশ দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে নেতাকর্মীদের পিটিয়ে আহত করে। সেই মারধরের ছবি আমাদের কাছে আছে।
হরতালের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নারায়ণগঞ্জ জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেন, আমরা সকাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছি। জনদুর্ভোগ হয় এমন কোনও কাজ করিনি। কিংবা গাড়ি পোড়ানো বা ভাঙচুরের মতো ঘটনাও ঘটেনি। তাহলে আমাদের কর্মসূচিতে পুলিশ কেন হামলা চালালো?
তিনি আরও বলেন, পুলিশের হামলায় আহতের সংখ্যা এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ হামলার পরে অনেক নেতাকর্মী ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে গেছেন। অনেকে আবার মিছিল থেকে আলাদা হয়ে পৃথকভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে পুলিশের হামলার পর মিছিলের একটা বড় অংশের নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সেই হিসাবে প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৩-৪ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ্ জামান হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বাম জোটের মিছিলে লাঠি চার্জ করা হয়নি। তারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। একটু আগেও মিছিল করেছে।
এদিকে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে সকাল ১০টায় শহরের দুই নম্বর রেলগেটে সমাবেশ করেন বামজোটের নেতারা। সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাসের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষ, জেলা কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাস প্রমুখ।
পুলিশের লাঠাচার্জের প্রতিবাদ জানিয়ে নেতারা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম দিন দিন বাড়ছে। তাই জনগণের জন্য আমরা আজ আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছি। আমাদের শান্তিপূর্ণ হরতালে পুলিশ বাধা দিয়েছে, লাঠিচার্জ করেছে। পুলিশ জনগণের ট্যাক্সের টাকার বেতন ভোগ করে জনদাবির আন্দোলনে হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ সরকারের শুধু লুটপাটই চালাচ্ছে না, সেই লুটপাটের বিরুদ্ধে জনগণ দাঁড়ালে তাদের দমাতে পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করছে। এভাবে বেশিদিন চলবে না।