মিয়ানমারের চোরাকারবারিরা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে চায়ের প্যাকেটের ভেতর লুকিয়ে, মাছের বরফের সঙ্গে নতুন মাদক আইস বাংলাদেশে পাচার করছে। এক্ষেত্রে তারা প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করছে। বিজিবি সদস্যরাও গোয়েন্দা তত্পরতা এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে সীমান্তে আইসের চালান প্রতিহত করছে। এ নিয়ে মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে বিজিবির ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে।
সীমান্ত পথে মিয়ানমার থেকে দেশে অনবরত আইস প্রবেশ প্রসঙ্গে এমনটিই বলেছেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্হিত বিজিবি ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) বীর উত্তম মুজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
বিজিবির ডিজি বলেন, আইস সীমান্ত দিয়ে আসলেও তা ঢাকায় যাচ্ছে। ঢাকার অভিজাত পরিবারের লোকেরা উচ্চমূল্যের এই মাদক সেবন করেন। তাই যত দিন পর্যন্ত মাদকের চাহিদা কমানো ও এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে না, তত দিন পর্যন্ত মাদকের চালানও ঠেকানো সম্ভব নয়।
মিয়ানমারের সঙ্গে অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার প্রসঙ্গে ডিজি বলেন, অরক্ষিত এলাকায় ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি করা যায়, কাঁটাতারের বেড়াও দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু দুদিন পরে গিয়ে যদি দেখা যায়, কাঁটাতারের বেড়া চোরাকারবারিরা সরিয়ে ফেলেছে। তাহলে তো সমাধান হলো না। তাই আমরা সশরীরে প্রতিহত করতে চাই। তবে সীমান্ত সড়ক হয়ে গেলে চোরাচালানসহ এসব কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি।
মাদকসহ চোরাকারবারিদের সঙ্গে কোনো বিজিবি সদস্য জড়িত নয়, এমনটি জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, বিজিবি এ ব্যাপারে কঠোর। কোনো সদস্য জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্হা নেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সক্ষমতায়, প্রশিক্ষণে ও অপারেশনাল কার্যক্রমে আমরা আকাশ ছুঁতে চাই। তবে আশা আছে, আরো বহুদূর যাওয়ার, অনেক কিছু করার।
বিজিবিতে যুক্ত হলো ৮৮৫ নবীন সদস্য : ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ ও শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে ৮৮৫ জন সদস্য নতুন করে বিজিবিতে যুক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন বিজিবির ডিজি। এরপর সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের প্যারেড কমান্ডার হিসেবে মনোজ্ঞ এ প্যারেড পরিচালনা করেন ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের অফিসার ইনচার্জ মেজর মো. সেলিমুদ্দোজা এবং প্যারেড অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন।
৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে বিজিবি মহাপরিচালক নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন উপদেশ ও দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন। নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে—শৃঙ্খলাই সৈনিকের মূলভিত্তি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সেই প্রকৃত সৈনিক। সততা ও কর্তব্যনিষ্ঠা, আনুগত্য ও নির্ভরযোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা ও কর্মতত্পরতা, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
উল্লেখ্য, ৯৭তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয়। বিজিটিসিঅ্যান্ডসিতে প্রশিক্ষণ নেওয়া মোট ৬৭০ জন রিক্রুটের মধ্যে ৬২১ জন পুরুষ এবং ৪৯ জন নারী রিক্রুট প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে।
তথ্য সূত্র : https://www.ittefaq.com.bd/