সৌদি আরব থেকে ছুটি নিয়ে দেশে আসার আট দিনের মাথায় তুচ্ছ ঘটনার জেরে স্বামীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন রোকসানা বেগম (৪৫)। ঘুমন্ত স্ত্রীকে খুনের পর লাশটি স্বামী মো. বাবুল (৩৮) নিজ হাতে ঘরের মেঝে কোদাল দিয়ে খুঁড়ে পুঁতে রেখে পালিয়ে যান।
ঘটনাটি ঘটে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার শানবান্ধা এলাকায়। লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের পর খুলনায় আত্মগোপনে থাকার ছয় দিনের মাথায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) ঘাতক বাবুলকে হাদিস পার্ক এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর থানায় এক প্রেস ব্রিফিং করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান। গ্রেফতার বাবুল হরিরামপুর উপজেলার দড়িকান্দি গ্রামের শেখ কাশেমের ছেলে। প্রায় তিন বছর আগে জেলার সিংগাইর উপজেলার বায়রা ইউনিয়নের চর নয়াবাড়ি গ্রামের মৃত ছইজুদ্দিনের মেয়ে রোকসানার সঙ্গে বিয়ে হয় বাবুলের।
পুলিশ জানিয়েছে, মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে মামলার বাদী খুনের শিকার রোকসানার ভাই ফজল (৭১) অর্ধগলিত লাশের ডান হাতের ট্যাটু ও ঘটনাস্থল হতে উদ্ধারকৃত হাতঘড়ি, লাশের অবয়ব ও শারীরিক গঠন দেখে শনাক্ত করেন মরদেহটি তার বোনের।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার জানান, বাবুল তিন বছর আগে রোকসানাকে গোপনে বিয়ে করেন। এটি ছিল বাবুলের দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পরেই সৌদি আরবে চলে যান রোকসানা। বিদেশ থেকে নিয়মিত দেশে স্বামীর কাছে টাকা পাঠাতেন। সেই টাকা দিয়ে শানবান্দা এলাকায় জমি কিনে একতলা বাড়ি নির্মাণ করেন বাবুল। চলতি মাসের ৬ তারিখে ছুটিতে দেশে আসেন রোকসানা। পরে সাভারের একটি ভাড়া বাসায় স্বামী বাবুলকে নিয়ে থাকেন।
গত ১৩ অক্টোবর শানবান্দা গ্রামের নির্মাণাধীন ওই বাড়িতে আসেন রোকসানা-বাবুল দম্পতি। রাতে সেখানে পারিবারিক বিষয় ও প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়া নিয়ে রোকসানার সঙ্গে বাবুলের কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর একসময় রোকসানা ঘুমিয়ে পড়ে। ভোররাতে রোকসানাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পাশের রুমের মেঝেতে বালুর মধ্যে লাশ পুঁতে রেখে পালিয়ে যায় বাবুল।
এদিকে পুলিশের হেফাজতে থাকা ঘাতক বাবুল জানান, দুই বছর আগে তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোকসানা সৌদি আরব যান। সেখান থেকে বাড়ি করার জন্য সাত থেকে আট লাখ টাকা পাঠান। ঘটনার দিন রাতে তার মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যা করে।
ওসি আব্দুর রউফ সরকার বলেন, ‘মামলার পর তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় সদর থানার এসআই মো. টুটুল উদ্দিন, এসআই শাহ জামালের একটি টিম খুলনা হাদিস পার্কের সামনে থেকে বাবুলকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবুল তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। শুক্রবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’