২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে ৩০০-৪০০ রোগী ভর্তি থাকে। রোগীদের অভিযোগ, বিছানায় ছারপোকার জন্য রাতে ঘুমানো যায় না। এছাড়া নেই মশারি ও বিছানার চাদরের ব্যবস্থা। নিজ দায়িত্বে থাকতে হয় সেখানে।
মহিলা ওয়ার্ডে জেলার জলঢাকা উপজেলার খুটামারা ইউনিয়নের হরিশ্চন্দ্রপাঠ গ্রামের রোগী জেসমিন বেগম বলেন, ‘গত বুধবার সকালে কোমর ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। এদিকে কোমরের ব্যথা অন্যদিকে ছারপোকার কামড়ে বিছানায় থাকা যায় না। একজন রোগী বেশিদিন এখানে থাকলে রক্তশূন্য হয়ে পড়বে।’
একই ওয়ার্ডে ওই উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নের কালকেওট গ্রামের আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘বুকের ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিন দিন আগে ভর্তি হয়েছি। চিকিৎসা নেবো কী? সারা রাত ছারপোকা ও মশার কামড়ে ঘুমাতে পারি নাই। বাথরুমের অবস্থা আরও বেহাল। দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে যায়।’
এদিকে, কোমর ব্যথায় চিকিৎসা নিতে আসা সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের গাবতলা গ্রামের বিউটি বেগম বলেন, ‘ছারপোকার কামড়ে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হবে। একজন মানুষের ঘুম হলো মহাওষুধ। ছারপোকার কামড়ে অতিষ্ঠ রোগীরা। এগুলো দেখার কেউ নেই, শুনারও কেউ নেই। ফলে প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।’
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) সকালে হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে এমন অভিযোগ করেন একাধিক রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের বিছানার তোশক অনেক পুরনো। বিছানার চাদর দুই থেকে তিন দিন পরপর পরিবর্তনের কথা থাকলেও জনবলের অভাবে সেগুলো পাল্টানো সম্ভব হয় না। তাছাড়া রোগীর চাপ থাকায় চাদর তাড়াতাড়ি নোংরা হয়। ফলে ছারপোকা জন্ম নেয়।
সরেজমিনে, সার্জারি ওয়ার্ডে একাধিক রোগী গাদাগাদি করে মাটিতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। মেঝের স্যাঁতস্যাঁতে তোশকে ছারপোকা বাসা বেঁধেছে। পাশেই অপরিষ্কার শৌচাগার। নেই স্বাস্থ্যবিধির কোনও বালাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ওয়ার্ডের এক রোগী বলেন, সরকারি হাসপাতালের এমন অবস্থা জানলে চিকিৎসা নিতে আসতাম না। গরিব মানুষ হাসপাতালে আসে ভালো হতে কিন্তু এখানে ওষুধের স্বল্পতা, ডাক্তারের সংকট, বিছানায় চাদর নাই, ছারপোকা কামড়ে ঘুমানো যায় না।
নীলফামারী পৌর শহরের কুখাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ও পুরুষ ওয়ার্ড চিকিৎসা নিতে আসা আনিছুর রহমান জানান, পাঁচ দিন আগে বুকের ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। বুকের ব্যথায় রাতে ঘুম আসে না। এর ওপর ছারপোকার কামড়ে জীবন অতিষ্ঠ।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, ‘প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের চেঞ্জিং রুম, লেখার টেবিল, খাতাপত্র ও ফাইলের ভেতরে ছারপোকা কিলবিল করছে। ওয়ার্ড রোগীর ভিড়ে তোশক ও চাদর রোদে শুকানোর সময় পাওয়া যায় না। বিশেষ করে মহিলা ওয়ার্ডে ছারপোকার অত্যাচারে রোগীর কাছে যাওয়া যায় না।’
জানতে চাইলে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. গোলাম রসুল রাখি বলেন, ‘বছরের পর বছর এক তোশক এক চাদর ব্যবহার হলেতো এ অবস্থা হবেই। তোশকের নতুন বরাদ্দ পেয়েও তা উত্তোলন করা হয়নি। এ বিষয়টি নিয়ে তত্ত্বাবধায়ককে অনেকবার বলেছি কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’
২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আবু আল হাজ্জাজ রোগীদের অভিযোগ শিকার করে বলেন, ‘ওয়ার্ড নতুন তোশক দেওয়া হয়েছে। রোদে শুকানো হয়েছে সব বিছানাপত্র। প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে স্প্রে করা হয়েছে। এরপরও ছারপোকার উপদ্রব কমছে না।’