নেত্রকোনার বন্যাদুর্গত এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। কয়েকদিন ধরে হালকা রোদের দেখা মিলছে। তবে মাঝে মাঝে কোথাও হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানি কমতে থাকায় বন্যায় প্লাবিত বিভিন্ন সড়ক ক্ষত নিয়ে জেগে উঠছে।
জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও সড়ক জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের টাকার হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ ১৪২ কোটি টাকা। সড়ক বিভাগ বলছে, বরাদ্দ পেলে আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে এসব সড়ক মেরামত করা সম্ভব হবে। এলজিইডির মতে তা সময়সাপেক্ষ।
জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০টি উপজেলায় বন্যায় ১৩৭ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা থেকে ইউনিয়ন ও বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ রাস্তা রয়েছে। এসব রাস্তার ক্ষতির পরিমাণ ৭৯ কোটি ১৮ লাখ টাকার বেশি। এছাড়া এক হাজার ৩১টি ছোট-মাঝারি আকারের কালভার্ট ও সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ক্ষতির পরিমাণ ১৩ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো। সবমিলে ক্ষতির পরিমাণ ৯৩ কোটি এক লাখ ৬০ হাজার টাকা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের তথ্যমতে, ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ সড়কের মোহনগঞ্জে, মোহনগঞ্জ-ধর্মপাশা ও মদন-খালিয়জুরীর আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন অংশে মেরামতের জন্য ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম শেখ জানান, ১৩৭ দশমিক ৩৭ কিলেমিটার রাস্তা ও ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার ৩১টি সেতুর জন্য ৯৩ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। উপজেলা-ইউনিয়ন ও বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলোর জন্য বরাদ্দ পেলে সেগুলো মেরামত ও কিছু অংশে নতুন করে করার প্রয়োজন হতে পারে। কতদিন সময় লাগতে পারে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণের কথা না বললেও বরাদ্দ প্রাপ্তি অনুযায়ী সংস্কারের কাজ হাতে নেওয়া হবে। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার বলে জানান তিনি।
কলমাকান্দার বাসিন্দা জমিল মিয়া জানান, এবার বন্যায় পাহাড়ি রাস্তা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর আগে তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। সরকারের উচিত আগে রাস্তাগুলো চলাচলের উপযোগী করা।
দুর্গাপুর উপজেলার গাওকান্দিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পাহাড়ি ঢলে আমাদের বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তাঘাটেরও ক্ষতি হয়েছে। প্রতিটি রাস্তায় বড় বড় গর্ত। পাহাড়ি ঢলে রাস্তা ভেঙে যাওোয় এলাকাবাসী দুর্ভোগে পড়েছেন।’
সড়ক ও জনপথ প্রকৌশল বিভাগের উপবিভাগী প্রকৌশলী রাজীব কুমার দাস জানান, ময়মনসিংহ-মোহনগঞ্জ সড়কের মোহনগঞ্জের ৫৮তম (৫৭-৫৮ কিলোমিটারের মাঝামাঝি) ও ৭১তম অংশের জন্য ৯ কোটি, মোহনগঞ্জ-ধর্মপামা সড়কের এক-বিশ কিলোমিটারের মধ্যে বিভিন্ন অংশের জন্য ৩২ কোটি ও মদন-খালিয়জুরী সড়কে বেশ কয়েকটি অংশের জন্য আট কোটি টাকার চাহিদা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ঠাকুরাকোণা-কলমাকান্দা ও সীমান্ত সড়ক ক্ষতি হয়েছে এবং কাজ চলমান থাকায় এই দুই সড়কের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়নি। বরাদ্দ পেলে তিন-চার মাসের মধ্যে সংস্কার করা সম্ভব হবে। প্রাথমিকভাবে সংস্কার করে চলাচলের জন্য উপযোগী করার কাজ হাতে নেওয়া হবে।