রাঙামাটির লংগদু উপজেলার সোনালী ব্যাংকে কৃষকদের নামে ঋণ নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার শতাধিক কৃষক নোটিশ পেয়ে জানতে পারেন, তাদের নামে ভুয়া ঋণ দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের কারসাজির মাধ্যমে সরকারি সহায়তার নামে স্থানীয় কৃষকদের ঋণের ফাঁদে ফেলেছে একটি চক্র।
লংগদু সোনালী ব্যাংক শাখার তথ্যমতে, উপজেলার প্রায় এক হাজার মানুষের মাঝে এই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দিতে অপারগতা জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। অন্যদিকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, ২০১২ সালের বিভিন্ন সময় সরকারি সহায়তা প্রদানের আশ্বাসে জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করে ঋণের ফাঁদে ফেলেছে একটি চক্র। ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগশাজসে একটি দালাল চক্র এই কাজ করেছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রথম অংশের সঙ্গে অন্যজনের দ্বিতীয় অংশ জুড়ে দিয়ে ভুয়া কাগজ তৈরি করে তাদের নামে কৃষি ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে।
তারা বলেন, কার্ডে উল্লেখিত নাম, জন্মতারিখ, পিতা ও মাতার নামের অংশ ঠিক রেখে পেছনের ঠিকানার অংশটি পরিবর্তন করে মাইনীমুখ ইউনিয়নের সোনাই এলাকার ঠিকানায় করা হয়েছে, যেটা আমাদের সঠিক ঠিকানা নয়। এভাবেই সবার সঙ্গে প্রতারণা করে ঋণের ফাঁদে ফেলা হয়েছে, যা তারা অবগত নন। এই ঋণ থেকে বাঁচতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন ভুক্তভোগীরা।
কৃষকের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করার সুবাধে কোনও কোনও কৃষককে ৫০০ বা ১০০০ করে টাকা দিয়ে বিদায় করে দালাল চক্র। বিনিময়ে কৃষকদের নামে ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ বরাদ্দ নিয়ে নেয় অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা ও দালাল চক্র।
লংগদু উপজেলার বগাচত্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. নাছির উদ্দিন কৃষিকাজ করে সংসার চালান। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংক লংগদু শাখা থেকে ৩৪ হাজার টাকা কৃষিঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়েছেন।
তার দাবি, তিনি ব্যাংক হতে কোনও ঋণ গ্রহণ করেননি। কে বা কারা তার নামে জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে নিয়েছে ঋণ। এখন ঋণ পরিশোধের চাপে দিশেহারা তিনি।
শুধু নাছির উদ্দিন নন, ঋণ পরিশোধের এমন নোটিশ পেয়েছেন উপজলোর সফিকুল ইসলাম, আইন উদ্দিনসহ আরও অনেকেই।
রাঙামাটি লংগদু সোনালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক মো. কাসেম জানান, একটি সার্টিফিকেট অনলাইনে চেক করার সময় জাতীয় পরিচয় পত্রের সঙ্গে অমিল খুঁজে যাওয়া যায়। তখন থেকে আস্তে আস্তে এসব তথ্য বের হতে থাকে। তবে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কিছু বলা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
লংগদু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক সরকার বলেন, বিষয়টি আমি অবগত আছি। ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তা দালাল চক্র মিলে এই আর্থিক অনিয়ম করেছে। এই ঋণের বোঝা দরিদ্র কৃষকদের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়। এ বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু তদন্ত করে এটার একটা সুরহা করবে।
সোনালী ব্যাংক রাঙামাটি শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমরা জেনেছি। কয়েকজন আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছেন। বিষয়টি তদন্তের করে দেখা হবে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, এই বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। ঘটনাটি তিনিও জানেন। বিষয়টি তদন্ত করবেন। প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাটি কত, সেই বিষয় চিহ্নত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।