নোয়াখালীতে ডুবে আছে ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট-ফসল, কষ্টে আছে মানুষ
বাংলাদেশ

নোয়াখালীতে ডুবে আছে ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট-ফসল, কষ্টে আছে মানুষ

গত এক মাস ধরে টানা বৃষ্টিতে একাধিকবার নোয়াখালী জেলা শহরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। পানি ঢুকেছে জেলার অনেক সরকারি দফতরেও। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে আবারও ডুবে গেছে পৌর এলাকা। জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে বেশিরভাগ সড়ক ও বাসাবাড়ির আঙিনায়। 

একই চিত্র দেখা গেছে জেলার ৯টি উপজেলায়। ভেসে গেছে অধিকাংশ মাছের ঘের। এতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তি ও কষ্টের মধ্যে পড়েছেন। শহরের পাশ দিয়ে যাওয়া খাল ও নালা দিয়ে ধীরগতিতে পানি নামায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। পানি বেড়ে যাওয়ায় কৃষিখাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে জেলা শহর ঘুরে দেখা যায়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে, জজ আদালতের আঙিনা, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ভবন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়, ডিবি অফিস, মৎস্য অফিস, নোয়াখালী প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলা জলমগ্ন হয়ে আছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে অনেক সড়ক। পৌর এলাকার অধিকাংশ সড়ক ভাঙাচোরা হওয়ায় পানির নিচে থাকা সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। 

শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিনারায়ণপুর, সোনাপুর, হাউজিং, মাইজদী বাজার, কৃষ্ণরামপুর, মাস্টারপাড়া, মধুপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার সব সড়ক ডুবে আছে। জলমগ্ন হয়েছে বেশিরভাগ বাসা-বাড়ির আঙিনা। প্লাবিত হয়েছে অনেক আধাপাকা বসতঘর। প্রধান সড়কের টাউন হল মোড়, জামে মসজিদ মোড়সহ কয়েকটি অংশে পানি ওঠায় আশপাশের দোকানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে অনেক দোকানি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কের পাশের পানি নিষ্কাশনের নালাগুলো উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে সড়কের ওপর দিয়ে। এতে বৃষ্টির পানির সঙ্গে নালার ময়লা মিশে একাকার হয়ে গেছে।

লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে আমার বাড়িতে হাঁটুসমান পানি। বসতঘরেও পানি। আশপাশের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মানুষ পানিবন্দি আছে। নালাগুলো দিয়ে পানি নামছে খুব ধীরগতিতে। এতে যত বৃষ্টি হচ্ছে, সমস্যাও তত বাড়ছে। আমরা খুব কষ্টে আছি।’

মাস্টারপাড়ার বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে বাড়ির উঠানে হাঁটুপানি। রান্নাঘরেও পানি। এজন্য দুপুরে রান্না করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে দোকান থেকে খাবার কিনে এনে খেয়েছি। আশপাশের নালায় জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছি।’

শহরের পাশ দিয়ে যাওয়া খাল ও নালা দিয়ে ধীরগতিতে পানি নামায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা

টানা বৃষ্টিতে সদর, সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, বেগমগঞ্জ, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্ণচর উপজেলার বেশিরভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে গ্রামীণ সড়কগুলো। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব উপজেলার বাসিন্দা। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে আমন ধানের বীজতলা। এ ছাড়া মাঠে পানি বেশি থাকায় অনেক এলাকার কৃষক আমন লাগাতে পারছেন না।

এদিকে, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বেড়েছে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। চলতি মাসের ১৮ দিনে চিকিৎসা নিয়েছেন নারী-শিশুসহ ৫২১ জন। নারী-শিশু ওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে সোমবার ভর্তি আছেন ১২৪ জন। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। হাসপাতালে রোগীদের স্যালাইন ও ওষুধ সংকটে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। গত এক সপ্তাহ ধরে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নেই স্যালাইন, জিংক, মেট্রোনিডাজল, সিপ্রোফ্লক্সাসিনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ। বাধ্য হয়ে স্যালাইন ও ওষুধ ফার্মেসি থেকে কিনছেন রোগী ও স্বজনরা।

টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ডুবে গেছে আমনের বীজতলা। কোথাও কোথাও রোপা আমনও দুই থেকে আড়াই ফুট পানিতে ডুবে আছে। এতে চলতি আমন মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হতে পারে। জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নানা শাকসবজিও। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন অনেক কৃষক। 

জলমগ্ন হয়েছে বেশিরভাগ বাসা-বাড়ির আঙিনা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, জেলায় এ বছর এক লাখ ৭৪ হাজার ১৪৫ হেক্টর আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার জন্য বীজতলা তৈরি করা হয়েছে ৯ হাজার ৮৩৪ হেক্টর। ইতোমধ্যে ১৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর আমন আবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া শাকসবজি আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। এরই মধ্যে বৃষ্টিতে বীজতলা, রোপা আমন ও শাকসবজি ডুবে গেছে। বেশিরভাগের ক্ষতি হয়েছে।

অধিকাংশ উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকেছে বৃষ্টির পানি। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে তাদের। 

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের সমস্যা। বিভিন্ন সময় এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা যেগুলো পানি চলাচলে বাধা তৈরি করে, সেগুলো উচ্ছেদে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খালের ওপর অবৈধ বাঁধ ও স্থাপনা উচ্ছেদে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা ঠিকমতো তা পালন করেননি। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় যা যা করার দরকার, তা করতে প্রস্তুত আছে জেলা প্রশাসন।’

Source link

Related posts

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মাদক এলএসডি উদ্ধার

News Desk

বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন সুনামগঞ্জ

News Desk

বাবুনগরীর ব্যক্তিগত সহকারী গ্রেফতার

News Desk

Leave a Comment