জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালে দেশের সব সরকারি দফতরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সব সরকারি অফিস-আদালতে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপনের এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন অধিদফতর থেকে জেলা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় নোয়াখালীর কয়েকটি সরকারি দফতরে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়। তবে অধিকাংশ দফতর নানা অজুহাতে স্থাপন করেনি বঙ্গবন্ধু কর্নার।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরে গিয়ে দেখা গেছে, বরাদ্দ না পাওয়া, নিজস্ব ভবন না থাকা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এসব দফতর বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করেনি। এর মধ্যে জেলা সমবায় কার্যালয়, জেলা সিভিল সার্জন অফিস, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সসহ অধিকাংশ দফতরে স্থাপন করা হয়নি বঙ্গবন্ধু কর্নার। ২০২০ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক তন্ময় দাসের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করলেও গত কয়েক মাস ধরে তা আধুনিকায়ন করে অন্যত্র স্থানান্তরের কাজ চলমানের কারণ দেখিয়ে সেটিও বন্ধ রয়েছে বলে জানা যায়।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মরত লাইব্রেরিয়ান মনির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কার্যালয়ে যে বঙ্গবন্ধু কর্নার রয়েছে, তা ২০২০ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। এর জন্য সরকারি কোনও বরাদ্দ না থাকলেও গণপূর্ত বিভাগ সে সময় প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মতো ব্যয় করে কর্নারের ইন্টেরিয়রের কাজ সম্পন্ন করে। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই, সাময়িকী ও অনেক ছবি রয়েছে। এটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচতলা থেকে তিনতলায় স্থানান্তরের কাজ চলছে। সে জন্য গত মে মাস থেকে এটি বন্ধ রয়েছে। তিনতলায় আরও বৃহৎ পরিসরে কর্নার স্থাপন করা শেষে তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’
জেলা সমবায় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন না করার বিষয়ে জানতে চাইলে সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক এস এম জাকারিয়া রিজভী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের তো নিজস্ব কোনও ভবন নেই। ডিসি অফিসের সঙ্গে আমাদের ভবন সংযুক্ত। সকল কার্যক্রম ডিসি অফিসের সঙ্গে মিলিয়ে করা হয়। যেহেতু ডিসি অফিসে বঙ্গবন্ধু কর্নার রয়েছে, তাই আমরা আর পৃথক করে স্থাপন করিনি। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপনের জন্য আমাদের মন্ত্রণালয় থেকেও কোনও পৃথক নির্দেশনা বা বরাদ্দ আসেনি।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের অফিস সহকারী প্রদীপ কুমার দে বলেন, ‘আমাদের অফিসে বঙ্গবন্ধু কর্নার নামে কিছু স্থাপন করা হয়নি। এ বিষয়ে কোনও নির্দেশনা আছে কিনা, তা আমার জানা নেই।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। আমাদের কার্যালয়ে অনেক কর্মকর্তার বসার মতো জায়গা নেই। সে জন্যই হয়তো এখানে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হয়নি। তা ছাড়া এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদফতরের কোনও নির্দেশনা রয়েছে কিনা, তা আমার জানা নেই।’
উপকূলীয় বন বিভাগ নোয়াখালীর সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা এ এস এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কার্যালয়ে পৃথকভাবে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা না হলেও বঙ্গবন্ধুর লেখা বিভিন্ন বই এবং মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ বিষয়ক বিভিন্ন বই রয়েছে। কার্যালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সময়ে সেসব বই পড়ে থাকেন।’
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিন মাহামুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কার্যালয়ে বৃহৎ পরিসরে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতরের সঙ্গে কথা-বার্তা চলছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই এখানে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা হবে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের কার্যালয়ে নিজস্ব উদ্যোগে আমরা স্বল্প পরিসরে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করেছি। যেহেতু এ বিষয়ে আলাদা কোনও বরাদ্দ নেই, তাই আমরা বৃহৎ পরিসরে এটি করতে পারিনি।’
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কে ছিলেন, সেটা ভুলতে বসেছিল একটা প্রজন্ম। সেই অবস্থা থেকে আমাদের দেশ ও জাতিকে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানানোর জন্য আমরা বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করা শুরু করেছি। এর মধ্য দিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, নবীন অফিসার ও তাদের পরিবার যারা এখানে আসবেন, তারা কর্নার পরিদর্শন করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারবেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের যে কর্নার স্থাপন করা হয়েছিল, সেটি অন্যত্র স্থানান্তর করে আধুনিকায়নের কাজ চলছে। এ ছাড়া সব সরকারি দফতরে কর্নার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’