পঞ্চগড়ে গত দুই দিন ধরে ঝোড়ো বৃষ্টি ও শৈত্যপ্রবাহে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শনিবার সকালেও বৃষ্টি হয়েছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল সারাদিন। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় শীত। এতে চরম বিপাকে পড়েন খেটে-খাওয়া মানুষজন।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র শনিবার সকাল ৯টায় ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। যা সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ১৬ মিলিমিটার। শুক্রবার এখানে ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গতকালও এখানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে ঝোড়ো ও দমকা হাওয়া বয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ছিল শৈত্যপ্রবাহ। শনিবার সকালে বৃষ্টি হয়েছে। এরপর থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সূর্য দেখা যায়নি। শনিবার সন্ধ্যার পরপরই হাটবাজার-রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। লোকজন ও যানবাহনের উপস্থিতি কমে যায়।
জেলা শহরের অটোচালক নাজিম উদ্দীন বলেন, গত দুই দিন ধরে ঝড়-বৃষ্টির কারণে শহর একেবারে ফাঁকা। লোকজনের উপস্থিতি নেই। সকাল থেকে বসে আছি, তেমন ভাড়া পাইনি। ঠান্ডার জন্য থাকাও যায় না। ভাড়া না পেলে মুশকিলে পড়ে যাবো। চাল-ডাল কিনতে হবে।
জেলা শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আনিছুর রহমান বলেন, ঝড়-বৃষ্টি বাতাস আর ঠান্ডার কারণে মানুষই নেই হাটবাজারে। ফলে দুদিন ধরে বিক্রি নেই। আজও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। তেমন বেচাকেনা হয়নি।
পাথরশ্রমিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঠান্ডার কারণে দুই দিন ধরে নদীতে নামতে পারিনি। কাজকাম না থাকলে আমাদের পেটে দানাপানি কেমন করে যাবে। দেখি আকাশটা ভালো হলে নদীতে নামবো।
চা-শ্রমিক সমেলা বেগম বলেন, জানুয়ারি থেকে চা-বাগানে কাজ নেই। বর্তমানে চা-কারখানাও বন্ধ। কাজকাম নেই। আমাদের আয়ও নেই। এই সময়টাতে আমাদের কষ্ট বেশি। সরকারিভাবে সহযোগিতা না পেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলতে অনেক কষ্ট হয় আমাদের। একই কথা জানিয়েছেন চা-পাতা উত্তোলনকারী শ্রমিক আকলিমা ও জবেদা বেগম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শামীম বলেন, এ ধরনের আবহাওয়া সরিষা ও আলুর জন্য ক্ষতিকর হলেও গম, ভুট্টাসহ অন্যান্য আবাদের জন্য আশীর্বাদ। কিছু কিছু এলাকায় সরিষার গাছ বাতাসে হেলে পড়েছে, আবার কিছু কিছু ডোবা এলাকায় বোরো বীজতলায় পানি জমেছে বলে খবর পেয়েছি। আলুক্ষেত উঁচু জমিতে হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রয়েছে। মাঠপর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। কৃষকদের আলুক্ষেতের পানি নিষ্কাশনের জন্য পরামর্শ দিয়েছি আমরা।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সিরাজউদ্দৌলা পলিন বলেন, হাসপাতালের আন্তঃবিভাগে কয়েকজন রোগী ভর্তি রয়েছেন। দুযোর্গপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। একারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও রোগী কম।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জানান, তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও গত দুই দিন ধরে এখানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টায় ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এটি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, জেলার পাঁচ উপজেলায় এ পর্যন্ত ৪০ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরও শীতবস্ত্র চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পেলে সেগুলোও বিতরণ করা হবে।