দেশের মানুষ আর ভাঙা নৌকায় উঠতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকালে কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি আরও বলেন, উনি (শেখ হাসিনা) আবার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে নৌকায় ভোট চেয়েছেন। শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের একটা গান ছিল- আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না।
nagad-300-250
‘বাংলাদেশের সব মানুষ এখন এই গান গাইতে শুরু করেছে। ভুলে যান ওই নৌকার কথা, ভুলে যান। মানুষ এখন আপনাদের বিদায় দেখতে চায়। দয়া করে সময় থাকতেই মানে মানে কেটে পড়ুন। তা না হলে এই বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের বিদায় করবে, কীভাবে করবে, সেটা আপনারা জানেন। অতীতে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে।’
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ হবেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সমাবেশ যাতে না হতে পারে, সেজন্য গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার- আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। সেখানে আপনারা বিভিন্ন রকম কথা বলবেন, ধোঁয়া তুলবেন, এটা হয় না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন নয়। নেতাদের কারাগারে নিক্ষেপ করে দ্রুত সাজা দিয়ে নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে চায় সরকার। গোমতী নামে বিভাগ কুমিল্লার মানুষ মেনে নেবে না বলেও জানান তিনি।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। কুমিল্লার টাউন হল মাঠে বেলা ১১টায় এ গণসমাবেশ শুরু হয়। পরিবহণ ধর্মঘট না থাকায় কোনো ভোগান্তি ছিল না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কুমিল্লা উত্তর, কুমিল্লা দক্ষিণ এবং মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগদান করেন। কাকডাকা ভোর থেকেই নগরীর টাউন হল মাঠের দিকে নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
সকাল ১০টার মধ্যেই পূবালী চত্বর এবং আশপাশের সড়কগুলো সমাগত নেতাকর্মীদের পদভারে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু সমাবেশ ততটা শৃঙ্খল ছিল না। মঞ্চে অনেকেই উঠে পড়েন। রোদের কারণে অনেক নেতাকর্র্মী মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। এতে মাঠের অনেক অংশ ফাঁকা ছিল।যদিও বিকালে তা পূর্ণ হয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রীর যশোর সমাবেশের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, উনি সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে, রাষ্ট্রের সব যন্ত্র ব্যবহার করে, হাজার হাজার বাস-ট্রাক নিয়ে যশোরে সভা করেছেন। এই সভায় তিনি ঘোষণা দিয়েছেন- আওয়ামী লীগ এলে জনগণ শান্তি পায়। কিন্তু দেশের মানুষ শান্তিতে নেই।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই দানবীয় সরকার আমাদের সব অর্জন কেড়ে নিয়েছে। এই সরকার আমাদের ভাতে মারছে, পানিতে মারছে, সব পর্যায়ে কর্মসংস্থান শেষ করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের যন্ত্রণায় গোটা দেশ আজ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আজ মানুষ মুক্তি চায়, মুক্তির জন্যই আজ এখানে আপনারা সমবেত হয়েছেন।
মির্জা ফখরুল সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ১৫ বছরে সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতি ধংস করে দিয়েছে, বিচার বিভাগ ধ্বংস করে দিয়েছে, ব্যবসা-বাণিজ্য শেষ করে দিয়েছে, কৃষিব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে, প্রশাসন শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় দেশ চলতে পারে না।
তিনি বলেন, সরকার জোর করে দুইবার নির্বাচন করেছে। ২০১৪ সালে কেউ ভোট দিতে যাননি, ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন, আর ২০১৮ সালে তো আগের রাতেই ভোট শেষ। আবার পুরোনো খেলা শুরু করেছে। সরাসরি তো ভোট দিতে সাহস নেই। কারণ তারা জানে ভোট যদি সুষ্ঠু হয়, ভোট যদি সবাই দিতে পারে, তাহলে আওয়ামী লীগের জামানত থাকবে না। সেজন্য ওরা ফন্দিফিকির বের করেছে। বলছে, আগের মতো ভোট হবে। অর্থাৎ ওরা থাকবে ক্ষমতায়, শেখ হাসিনা থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, এমপিরা থাকবেন এমপি, মন্ত্রীরা থাকবেন মন্ত্রী। আর আমরা ভোট দেব। আবার নাকি ইভিএমে ভোট হবে। যেমন খুশি তেমন চুরি করবে। এটার জন্য তারা আবার গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু করেছে। রাজশাহীতে গত ১১ দিনে ৩৫টি গায়েবি মামলা করেছে আর সারা দেশে ১০৪টার মতো মামলা দিয়েছে।
নেতাদের দ্রুত সাজা দিয়ে নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবার নামে অসংখ্য মামলা রয়েছে। শুধু তাই নয়, মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের দ্রুত বিচার করতে চাচ্ছে। অর্থাৎ খালেদা জিয়াকে যেভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে, তাদেরও কারাগারে নিক্ষেপ করে সহজেই নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে চায়। ওইভাবে ওদের নির্বাচনি বৈতরণি পার হতে দেশের মানুষ দেবে না। এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না- যতক্ষণ না শেখ হাসিনা পদত্যাগ করছে, যতক্ষণ না সংসদ বিলুপ্ত করা হচ্ছে, যতক্ষণ না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হয়। পরিষ্কার কথা- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিনের সভাপতিত্বে এবং কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় গণসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এমপি, রাশেদা বেগম হীরা, লায়ন হারুন রশিদ, জেড খান মো. রিয়াজ উদ্দীন নসু, খালেদ মাহবুব শ্যামল, আবুল কালাম আজাদ, জাকারিয়া তাহের সুমন, ড. শাহিদা রফিক, বোরহান উদ্দিন, মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আক্তারুজ্জান, সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি, চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিমুল্লাহ সেলিম প্রমুখ।