পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার পাওয়া গেলো ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা। এর আগে এত টাকা আর পাওয়া যায়নি। সকাল থেকে টানা ১৮ ঘণ্টা গণনা শেষে রাত পৌনে ২টার দিকে জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ টাকার পরিমাণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশি নগদ টাকা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ও সোনা-রূপার অলঙ্কারও পাওয়া গেছে সিন্দুকে।
চার মাস ১০দিন অর্থাৎ ১৩০ দিন পর শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে খোলা হয় মসজিদের ৯টি দানবাক্স। জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের তত্ত্বাবধানে সিন্দুকগুলো খোলা হয়। তবে এবার টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় আলাদা একটি ট্রাংক দেওয়া হয়। এ সময় দানবাক্স খোলা উপ-কমিটির আহ্বায়কসহ বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত ছিলেন। দানবাক্স খোলা ও গণনাকে ঘিরে মসজিদসহ আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। ২২০ জন লোক সকাল থেকে রাত অবধি টাকাগুলো গুনে শেষ করেন।
জানা গেছে, এর আগে সর্বশেষ ২০২৩ সালের ৯ ডিসেম্বর খোলা হয়েছিল পাগলা মসজিদের ৯টি দানবাক্স। তখন রেকর্ড ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কারও পাওয়া যায়।
২০২৩ সালে চারবার খোলা হয়েছিল কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স। চারবারে মোট ২১ কোটি ৮৭ লাখ ৮৫ হাজার ১৮১ টাকা পাওয়া যায়। টাকার পাশাপাশি হীরা, বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারও পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ।
সকালে ৯টি সিন্দুক ও একটি ট্রাংক খোলার পর টাকাগুলো বস্তাবন্দি করা হয়। এতে প্রয়োজন পড়ে ২৭টি বস্তা। পরে বস্তাগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সারাদিন চলে গণনাপর্ব। টাকা গণনায় সহযোগিতা করে রূপালী ব্যাংকের ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ মোট ২২০ জন। প্রসঙ্গত, পাগলা মসজিদের টাকা রূপালী ব্যাংকে রাখা হয়ে থাকে।
স্থানীয়রা জানায়, মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করে থাকে। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়-এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসেন পাগলা মসজিদে, দান করেন মোটা অঙ্কের টাকা।
মসজিদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব-অসহায় লোকদের সহযোগিতা করা হয়। তাছাড়া ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছে।
মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দানের টাকায় মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে ৩০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে। থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ আরও নানা আয়োজন। কমপ্লেক্সের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে প্রকল্পের কাজ।