পাটুরিয়ায় নেই ভোগান্তি, স্বস্তিতে ঘরে ফিরছে মানুষ
বাংলাদেশ

পাটুরিয়ায় নেই ভোগান্তি, স্বস্তিতে ঘরে ফিরছে মানুষ

ঈদযাত্রা শুরু হলেও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে যাত্রী ও যানবাহনের তেমন চাপ নেই। লঞ্চঘাটেও ভিড় নেই যাত্রীদের। ঘাটে আসার পরপরই যাত্রী ও যানবাহনগুলো ফেরিতে উঠে নদী পারাপার হচ্ছে। তবে ঈদের দুই-তিন দিন আগে এই ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষজন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। ঈদযাত্রায় ফেরিঘাট এলাকায় ভোগান্তি ছাড়াই যানবাহন ও ঘরমুখো মানুষ পার হচ্ছেন।

ফেরিঘাট সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর আগে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ। ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের এই পথে ফেরি পারাপারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকে ভোগান্তির শিকার হতেন যাত্রীরা। ঈদের সময় সেই দুর্ভোগ বেড়ে যেতো কয়েকগুণ। পদ্মা সেতু চালুর পর কমেছে ভোগান্তি; স্বস্তি ফিরেছে ঘাট দিয়ে যাতায়াতকারীদের। এখন বেশিরভাগ যানবাহন পদ্মা সেতু ব্যবহার করলেও কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, যশোর, মাগুরা, ফরিদপুর ও রাজবাড়ীর বেশ কিছু পরিবহন ও পণ্যবাহী ট্রাক এই নৌপথে চলাচল করছে। সাধারণ সময়ে দেড় থেকে দুই হাজার যানবাহন পারাপার হলেও ঈদ ঘিরে দ্বিগুণ হয়েছে। তবে এবার ভোগান্তি ছাড়াই পারাপার হচ্ছেন যাত্রীরা।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ঈদে যাত্রী ও যানবাহন নির্বিঘ্নে পারাপারের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনটি ঘাট প্রস্তুত আছে। পাশাপাশি ১৫টি ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যানবাহনের বাড়তি চাপ কমাতে ঈদের তিন দিন আগে ও পরে বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার। ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতে পারাপার হচ্ছেন। কারও কোনও ধরনের সমস্যা হচ্ছে না।’

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন সর্বশেষ গত বুধবার রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ দৌলতদিয়া ট্রাক টার্মিনালের সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সভা করেছেন। তিনি যাত্রীদের কোনও ধরনের হয়রানি ছাড়া নির্বিঘ্নে পারাপারের জন্য সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলেছেন। সেইসঙ্গে ঘাট-নির্ভর ব্যবসায়ী, রিকশাচালক, অটোরিকশাচালকদেরকে যাত্রীদের সঙ্গে নির্দয় আচরণ না করতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘ঈদে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে নদী পার হয়ে দৌলতদিয়ায় এসে যারা আবার যাত্রা শুরু করবে, তাদের জন্য আমাদের প্রস্তুতি বেশি। কারণ ওই সময়টা অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। ছিনতাইকারী ঠেকাতে ঘাট এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপত্তায় ঘাটে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। লঞ্চে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন ঠেকানো এবং পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম রাখার ব্যাপারেও কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।’

ঘাটে আসার পরপরই যাত্রী ও যানবাহনগুলো ফেরিতে উঠে নদী পারাপার হচ্ছে

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদযাত্রা স্বাভাবিক করতে ১৫টি ফেরি, ২০টি লঞ্চ এবং ১০টি স্পিডবোট চলাচলের জন্য প্রস্তুত রেখেছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে ও যানজট নিরসনে ঈদের আগে-পরে মোট সাত দিন পশুবাহী এবং জরুরি পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ব্যতীত সাধারণ ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে। রাতে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকবে।

জামান পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাটের ম্যানেজার মো. মনির হোসেন বলেন, ‘ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি আমরা। ফেরিতে জুয়া খেলা ও ছিনতাইরোধে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।’

ঘরমুখো মানুষের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে দৌলতদিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘নদীতে থাকবে নৌ-পুলিশের টহল। লঞ্চে ও ফেরিতে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিতে দেওয়া হবে না। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি লঞ্চে পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম রাখতে বলা হয়েছে। ফেরিতে জুয়া খেলা ও ছিনতাইরোধে অভিযান চলবে।’

স্বস্তিতেই মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে জানিয়ে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, ‘ঈদের আগের ও পরের তিন দিন জরুরি সেবা ব্যতীত পণ্যবাহী ট্রাক এবং কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে। ৬ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। আশা করছি, উৎসবমুখর ঈদযাত্রা উপহার দিতে পারবো। যাত্রী হয়রানি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি এবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’

ঈদের দুই-তিন দিন আগে এই ঘাটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা

এদিকে, ঈদযাত্রা শুরু হলেও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের অংশে যাত্রী ও যানবাহনের তেমন চাপ নেই। মহাসড়কে স্বস্তিতেই চলাচল করছে দূরপাল্লার পরিবহন ও আঞ্চলিক বাসগুলো। তবে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সদর উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ চলায় যানজটের শঙ্কা রয়েছে। ফলে কিছুটা ভোগান্তি হতে পারে ঈদে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড, জাগীর পুলিশ ক্যাম্প, গোলড়াসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ঘুরে দেখা গেছে, পাটুরিয়া ও আরিচা ফেরিঘাটমুখী যানবাহনের চাপ কম। কিছুক্ষণ পরপর দূরপাল্লার পরিবহন স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে। ঢাকা থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত চালাচলকারী পরিবহনগুলোতেও যাত্রী সংখ্যা কম।

ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়া মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঈদযাত্রায় ১৫-২০ ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করতে হতো মহাসড়ক ও ফেরিঘাট এলাকায়। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে এই পথে যানবাহনের চাপ অনেক কম হয়। তাই এখনও পাটুরিয়া ঘাট হয়েই বাড়িতে যাতায়াত করি। প্রতি বছরের মতো এবারও পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছি। কোথাও যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি।’

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের বাণিজ্য শাখার উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘শনিবার ঘাট এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা বেশি ছিল। তবে পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই পারাপার হয়েছেন যাত্রীরা। যাত্রীবাহী বাস ও ছোট গাড়ি ঘাটে আসা মাত্রই ফেরিতে ওঠে নদী পার হয়েছে। ১১টি ফেরি চলাচল করছে। ঈদযাত্রায় যাত্রী ও যানবাহন বাড়লে আরও দুটি ফেরি যুক্ত হবে। আশা করছি, ভোগান্তি ছাড়াই এবার ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহনগুলো এই নৌপথে পারাপার হতে পারবে।’

Source link

Related posts

ছয় মাসেও মেরামত হয়নি সেতু, ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

News Desk

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি, ব্রহ্মপুত্র-তিস্তায় ভাঙন শুরু

News Desk

এবার ভাঙলো মাউতির বাঁধ, ডুবছে হাওরের ফসল

News Desk

Leave a Comment