নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আজ শনিবার সকাল ছয়টা থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। হঠাৎ ফেরি বন্ধের ঘোষণায় ঘাট এলাকায় ছোট গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন আটকে থাকা গাড়ির চালক ও সাধারণ যাত্রীরা।
এর মধ্যে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যান পারাপারে একটি ফেরি পাটুরিয়া ঘাটে ভেড়াতে গেলে যাত্রীরা দৌড়ে সেখানে ওঠার চেষ্টা করেন। ঘাট পারাপারে মরিয়া হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে দুই ঘাটের এলাকা থেকে কোনো ট্রলার বা স্পিডবোট ছেড়ে যায়নি। ঘাট এলাকায় পুলিশি প্রহরা জোরদার করা হয়েছে।
ঈদের আগেভাগেই মানুষ গ্রামের দিকে ছুটতে থাকায় দুদিন ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিতে প্রচণ্ড ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সারা দিন নৌপথে অসংখ্য মানুষের ভিড় হয়। এতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মানুষের চাপ সামাল দিতেই কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. খোরশেদ আলম আজ সকালে মুঠোফোনে বলেন, গতকাল শুক্রবার মধ্যরাতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা আসে। নির্দেশনা মোতাবেক আজ সকাল ছয়টা থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেরি বন্ধ রাখায় উভয় ঘাটে গাড়ি আটকা পড়েছে।
অতি জরুরি রোগী বা লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত, তা জানতে চাইলে খোরশেদ আলম বলেন, ‘স্পষ্ট করে এমন নির্দেশনা না থাকলেও গুরুত্ব বিবেচনা করে অনেক জরুরি গাড়ি জমা থাকলে বিশেষ বিবেচনায় মাঝেমধ্যে ছোট এক-দুটি ফেরি ছাড়তে পারি।’ সন্ধ্যার পর থেকে পণ্যবাহী বা জরুরি গাড়ি পারাপারের নির্দেশনার ব্যাপারে বলেন, ‘এমন কোনো নির্দেশনা নেই। সকাল ছয়টা থেকে ফেরি বন্ধ রাখতে হবে, এটাই জানি। কখন থেকে ফেরি চলাচল করবে বা স্বাভাবিক হবে, এমন সঠিক তথ্য জানা নেই।’
আজ সকালে দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে নদী পারের অপেক্ষায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ঢাকাগামী গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে অনেক ছোট গাড়ি পারাপারের অপেক্ষায় আছে। হঠাৎ ফেরি বন্ধ হওয়ায় তাঁরা দৌলতদিয়া ঘাটে এসে বিপাকে পড়েছেন।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সকাল ছয়টা থেকে ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেরি বন্ধের খবর পেয়ে অনেকেই রাতেই ঘাটে এসে পৌঁছেছেন। সারা রাত যত দূর সম্ভব গাড়ি পার করেছি। এখনো পাটুরিয়া প্রান্তে কয়েক শ ব্যক্তিগত ছোট গাড়ি নদী পারের অপেক্ষায় আছে। অন্যান্য গাড়ি তো আছেই। ঘাটে যেকোনো মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। এ আশঙ্কায় আমরা ঘাট থেকে সব ফেরি অন্যত্র সরিয়ে রেখেছি। শুধু একটি ছোট ফেরি দিয়ে বিশেষ বিবেচনায় রোগী, লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স পার করছি।’
এদিকে পারাপার বন্ধ থাকায় পাটুরিয়া ঘাটে আসা যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এসব যাত্রী ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে ঘাটে আসেন। আজ সকাল নয়টার দিকে সরেজমিনে পাটুরিয়া প্রান্তে দেখা গেছে, ফেরি বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় নদী পারের যাত্রীরা অবস্থান করছেন। পাঁচ নম্বর ঘাট এলাকায় পাঁচটি ফেরি নোঙর করে রাখা হয়েছে। অনেক ব্যক্তিগত গাড়ি আটকা পড়েছে।
সকাল সোয়া নয়টার দিকে লাশবাহীসহ কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স পারাপারের জন্য মাধবীলতা নামের একটি ছোট ফেরিতে দুই নম্বর ঘাটের কাছে এলে যাত্রীরা দৌড়ে সেই ফেরিতে ওঠার চেষ্টা করেন। এরপর ফেরিটি আর পন্টুনে ভেড়েনি। বেশ কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, ফেরি বন্ধ রাখা হওয়ার বিষয়টি শুক্রবার থেকে জানানো জরুরি ছিল। তাহলে তাঁরা ঘাটে আসতেন না। তাঁদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।