লকডাউনের মধ্যে কয়রায় অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে বিস্কুট আনতে। সেখানে মানা হচ্ছেনা কোন স্বাস্থ্য বিধি। অভিভাবকরা দুচিন্তায় আর হতাশায় দিনাতিপাত করছে বলে তারা জানায়। আম্ফান ঝড়ের পর এসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেনে এনে তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে বিস্কুট দেয়া হয় বলে শিক্ষার্থীরা জানায়।
শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামান্য বিস্কুটের জন্য স্কুলে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে। গতকাল বুধবার সরেজমিনে কয়রা উপজেলার ৪নং মংলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গিয়ে দেখা যায়, কোন শিক্ষার্থীর মুখে মাস্ক নেই।
বিদ্যালয়ে নেই কোন হ্যান্ড স্যানিটাইজার। বিস্কুট নেয়ার আশায় শিক্ষার্থীরা সকাল ৮টা থেকে বিদ্যালয়ে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। কেউ কেউ বিদ্যালয়ের মাঠে ক্রিকেট খেলছে। আবার কোন কোন শিক্ষার্থী তার সহপাটির সাথে মারামারি করছে। এরপর সকাল ১০টায় বিস্কুট দেয়া শুরু হয়। তখন বিস্কুট নিয়ে তারা বাড়ি ফিরছে।
এসময় সুমাইয়া নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, সে সকাল ৮টা থেকে বিদ্যালয়ে এসে বিস্কুটের আশায় অপেক্ষা করেছে এবং সকাল ১০টায় বিস্কুট নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। লাকি নামের এক অভিভাবক জানায়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছেলে-মেয়েদের বিস্কুট পৌঁছিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও কয়রা উপজেলার কোন বিদ্যালয় সেটা করছে না।
উপজেলার কাটমারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোহাগ হোসেন জানায়, তাদেরও স্কুলে গিয়ে বিস্কুট আনতে হয়। এছাড়া উপজেলা দিঘিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়শা খাতুন জানায়, আমি সহ ওই বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী মাসে একবার স্কুলে যাই বিস্কুট আনতে। আছিয়া বেগম নামের এক অভিভাবক জানায়, আমার ছেলেকে কাটমারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে বিস্কুট আনতে হয়। তাতে তাকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার বিস্কুট বরাদ্দ করেছে। অথচ এই বিস্কুট অধিকাংশ শিক্ষকদের বাড়িতে আত্মীয় বা প্রতিবেশি বেড়াতে গেলে তাদেরকে ওই বিস্কুট দেয়া হয়। এব্যাপারে ৪নং মংলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা বেগম বলেন, আমরা অধিকাংশ সময়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিস্কুট পৌঁছে দিয়ে থাকি। কিন্তু আজ (বুধবার) শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেকে বিস্কুট দেয়া হয়েছে।
এব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি নিষেধ করেছি, স্কুলে ডেকে আর বিস্কুট দেয়া হবে না। তখন তাকে প্রশ্ন করা হয় আপনার সাথে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কথা হয়েছে তখন তিনি বলেন হ্যাঁ। এসময় শিক্ষা অফিসারকে বলা হয় যে, প্রধান শিক্ষক রেবেকা বেগম তো বলেছে আপনার সাথে তার কোন কথা হয়নি। তখন তিনি রাগান্বিত্ব হয়ে বলেন, হাট-বাজারে শিক্ষার্থীরা গেলে কোন অসুবিধা হয়না, স্কুলে বিস্কুট আনতে গেলে তখন মানুষের চোখে পড়ে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস জানায়, শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিস্কুট দেয়ার কথা। সেটা যদি শিক্ষকরা না করে থাকে তাহলে ওই স্কুলের বিস্কুট বন্ধ করে দেয়া হবে। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।