রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কামারগাঁও এলাকার বাসিন্দা বিজয় ঋষি। অভাব-অনটনে গ্রামে ফিরে আসেন। এ বছর অন্যের কাছ থেকে ১৫ কানি জমি বর্গা নিয়ে বোরো ও বিআর-২৮ ধানের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা আগাম বানের পানিতে তলিয়ে গেছে তার স্বপ্নের সোনালী ফসল। আধাপাকা ধানগুলো পানির নিচে দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিজয় ঋষি বলেন, ‘১৫ হাজার টাকা দিয়ে গ্রামের খোকা ঋষি ও সন্ন্যাসী ঋষির কাছ থেকে ১৫ কানি জমি বর্গা নিয়েছিলাম। বছরে একটি মাত্র ভালো ফসল পাওয়ার আশা ছিল। ধান বিক্রি করে ধারদেনা পরিশোধ করতে চেয়েছিলাম। সব আশা শেষ হয়ে গেলো!’
তিনি আরও বলেন, ‘বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল এই ধানের জমি। স্বপ্নের ফসল এভাবে চোখের সামনে পানির নিচে চলে যাবে কখনও ভাবতে পারিনি। এমন দুঃসময়ে কৃষি বিভাগ বা উপজেলা প্রশাসনের কেউ এখন পর্যন্ত খবর নেয়নি।’
হাওর অঞ্চলের কৃষকদের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত অন্তত এক হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, সবমিলে ৩৫০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নাসিরনগর পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা রূপন দাস বলেন, ‘হাওরে আমার আট কানি জমি আছে। এ বছর ইরি ও বোরো ধান করছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু আগাম বানের পানি সব তলিয়ে গেছে। এক মুঠো ধানও হাওর থেকে বাড়িতে আনতে পারিনি। শুষ্ক মৌসুমে এ ধানের জমি ছিল একমাত্র অবলম্বন। আর বর্ষা মৌসুমের মাছ বিক্রি করে চলত আমার পরিবারের জীবনযাত্রা। কিন্তু এবছর ফসল হারিয়ে আমি নিঃস্ব।’
মেদির হাওর, আকাশি হাওর, আটাউরি বিল ও বালিয়া বিলসহ পুরো এলাকার কৃষকদের অবস্থা বিজয় ঋষি ও রূপন দাসের মতো। সরকারি কোনও সহায়তা এখনও পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন। সহায়তা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
কৃষক জিলু চৌধুরী বলেন, ‘৭০ কানি জমির ধান পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোনও সরকারি দফতরের কেউ যোগাযোগ করেননি। শুনেছি কারা কারা নাকি তালিকা প্রণয়ন করছেন।’
নাসিরনগর সদরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আজদু মিয়া বলেন, ‘আমার জমি পানির নিচে। ধানের জমির ওপর দিয়ে এখন নৌকা চলে। অনেক কৃষক একমাত্র ফসল হারিয়ে নিঃস্ব। কেউ এখনও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নের জন্য আমাকে জানায়নি। এমন কোনও নির্দেশনাও আসেনি।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবু সাইদ তারেক জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রণয়ন কো হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার-চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দুই হাজার ৫০ জনের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রয়োজনে এই তালিকা আরও সম্প্রসারণ করা হবে।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান শাওন জানান, হাওর পাড়ে মাইকিং করে কৃষককে ৮০ ভাগ পরিপক্ক ধান কেটে ফেলতে বলা হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হবে।