দিনাজপুরের ফিলিং স্টেশনগুলো থেকে পেট্রল ও অকটেন উধাও হয়ে গেছে। গত দুই দিন ধরে জেলার সব ফিলিং স্টেশনে পেট্রল ও অকটেন নেই বলে কাগজ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে পেট্রল ও অকটেন পাওয়া যাচ্ছে খোলা বাজারে অতিরিক্ত দামে। এ অবস্থায় গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সংকট দেখিয়ে পেট্রল নিয়েও কারসাজি করছে ফিলিং স্টেশনগুলো।
দিনাজপুর শহরের লিলি মোড়, সিঅ্যান্ডবি মোড়, বড়পুল, ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড, বটতলী, পুলহাট, পাসপোর্ট অফিস মোড়, বালুয়াডাঙ্গা, শিকদার হাটসহ বিভিন্ন স্থানে খোলা বাজারে ১৩০ টাকা দরে পেট্রল বিক্রি হচ্ছে। অথচ পেট্রলের নির্ধারিত মূল্য ৮৯ টাকা লিটার। তবে কিছু কিছু পাম্পে পাওয়া যাচ্ছে অকটেন।
শহরের বিভিন্ন পাম্প ঘুরে দেখা গেছে, পেট্রল দেওয়ার মেশিনের সামনে ‘পেট্রল ও অকটেন নেই’ লেখা কাগজ ঝুলছে। বটতলী এলাকার সমতা ফিলিং স্টেশনে ঝুলছে, ‘পেট্রল ও অকটেন নেই’ লেখা কাগজ।
কেন এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে জানতে চাইলে সমতা ফিলিং স্টেশনের হিসাবরক্ষক হেলাল হোসেন বলেন, ‘তেলের প্রধান ডিপো থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পেট্রল ও অকটেন নেই। তাই আমরাও তেল বিক্রি করতে পারছি না। এজন্য ‘পেট্রল ও অকটেন নেই’ লেখা কাগজ ঝুলিয়ে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘পাম্পে প্রতিদিন ছয় থেকে সাত হাজার লিটার তেল বিক্রি হয়। এখন বিক্রি বন্ধ। ক্রেতাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। যদিও নানা ধরনের কথা শুনতে হচ্ছে আমাদের।’
সমতা ফিলিং স্টেশনের সহকারী ম্যানেজার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন ডিপোতে তেল সংকট। ঈদের দুই দিন পর থেকেই আমাদের তেল দেওয়া হচ্ছে না। এজন্য আমাদের পাম্পে তেল শেষ হয়ে গেছে।’
শহরের মোটরসাইকেল চালক সুব্রত রায় বলেন, ‘আমি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করি। মোটরসাইকেল ছাড়া চলতে পারি না। প্রতিদিন মোটরসাইকেল চালিয়ে কর্মস্থল ও বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। কিন্তু কোনও পাম্পে পেট্রল পাচ্ছি না। কয়েকদিন আগে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছিল না। এভাবে নেই বলে পরে দাম বাড়ানো হয়। এখন মনে হচ্ছে, পেট্রলের দাম বাড়ানো হবে।’
স্থানীয় মোটরসাইকেল চালক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কোনও পাম্পে তেল নেই। তবে খোলা বাজারে তেল পাওয়া যাচ্ছে। এক লিটার পেট্রলের দাম চাওয়া হয়েছে ১৩০ টাকা। আমি নিইনি, ভাবলাম পাম্পে পাবো। এখন দেখি পাম্পে নেই। আমার প্রশ্ন হলো, খোলা বাজারে পেট্রল এলো কোথায় থেকে।’
শহরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ে খোলা বাজারে পেট্রল বিক্রেতা মীম আক্তার বলেন, ‘তেলের সংকট হবে আগেই জেনেছি। এজন্য ১৩৫ লিটার পেট্রল কিনে রেখেছি। এখান একটু বেশি দামে বিক্রি করছি। কারণ আমি পুঁজি খাটিয়েছি। তবে কোন পাম্প থেকে পেট্রল কিনেছেন তা জানাতে চাননি মীম।
বড়পুল এলাকার খুচরা তেল বিক্রেতা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি একটি গ্যারেজ থেকে ১০০ টাকা লিটার দরে পেট্রল কিনেছি। বিক্রি করছি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। ওই গ্যারেজের মালিক পেট্রল মজুত করেছেন।’ তবে তিনি কোন গ্যারেজ থেকে কিনেছেন তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
বটতলীর মেসার্স সরকার পাম্পের কর্মচারী ইউসুফ আলী বলেন, ‘পাম্পে পেট্রল নেই। তবে দু’একদিনের মধ্যে আসবে। এজন্য ক্রেতাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
বিরল বাজারের এশিয়া ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘ডিপো থেকে আমাদের পেট্রল ও অকটেন দেওয়া হচ্ছে না। এজন্য আমরা তেল বিক্রি করতে পারছি না। আমাদের কাছে মজুত করা কোনও তেল নেই।’
পদ্মা অয়েল কোম্পানির পার্বতীপুর ডিপোর উপব্যবস্থাপক (অপারেশন) আজম খান বলেন, ‘বর্তমানে আমরা গ্যাসফিল্ড থেকে তেল কম পাচ্ছি। তাই বিভিন্ন ডিলার ও এজেন্টদের ঠিকমতো সরবরাহ করতে পারছি না। তবে সরবরাহ স্বাভাবিক হলে তেলের সংকট থাকতো না।’