করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত ‘কঠোর’ লকডাউনের একাদশতম দিন পার হয়েছে। চলবে চতুর্দশতম দিন পর্যন্ত। তার মধ্যেই আজ রোববার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল, বিপণিবিতানসহ দোকানপাট খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আর এতে করেই পাল্টে গেছে লকডাউনের চিত্র। রাজধানীর রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহনের চাপে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট, প্রচুর মানুষের আনাগোনা সর্বস্তরে। রোববারের আগেই সার্বক্ষণিক খোলা থাকছে অলি-গলি, পাড়া-মহল্লার ছোট বড় দোকান। চেকপোস্টগুলো চলছে ঢিলেঢালাভাবে, ঢাকামুখী মানুষের ভিড়ে আটকে আছে পদ্মার কাঁঠালবাড়ি ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। সব মিলিয়ে লকডাউনের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে চলাচল শুরু করেছে মানুষ। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল শনিবার সরকারি ছুটির দিন থাকার পরও রাজধানীর রাস্তায় ছিল প্রচুর যানবাহন ও মানুষের ভিড়। বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্টের ব্যারিকেড দেয়া দেখলেও সেগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের তেমন একটা দেখা যায়নি। গণপরিবহন না থাকলেও প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রচুর পরিমাণ রিকশা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছোট-বড় ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান চলাচল করছে। দুপুরের পর থেকে দেখা গেছে, নানা বয়সের নারী-পুরুষের আনাগোনা, যা লকডাউন চলাকালে এর আগে খুব বেশি দেখা যায়নি। এদিকে অলি-গলি, পাড়া-মহল্লার ভেতরে থাকা জামাকাপড়ের দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান ইতোমধ্যেই খুলে দিয়েছে। কয়েক দিন আগেও তারা লুকিয়ে শাটার অর্ধেক নামিয়ে দোকান খোলার চেষ্টা করলেও গতকাল দুপুরের পর থেকে পুরোপুরি খুলে দিয়েছে। শুধু দোকানই খোলেনি, সেখানে ক্রেতাদেরও ভিড় দেখা গেছে।
গতকাল মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট এলাকায় দেখা যায় বেশ কিছু কাপড়ের দোকানে কেনাবেচা চলছে। একদিন আগেই দোকান খোলার কারণ জানতে চাইলে একজন বলেন, ‘আর পারছি না। সারা বছরের মধ্যে রমজান মাসেই একটু কেনাবেচা হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছর থেকে আমাদের সব ব্যবসা বন্ধ। বোনাস দূরের কথা শ্রমিকদের বেতন পর্যন্ত দিতে পারছি না। কাল রোববার থেকে যেহেতু সরকার দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে। তাই এক বেলা আগে খুললে খুব বেশি অপরাধ হবে না’।
ওই দোকানের পাশের পান ব্যবসায়ী আল আমিন বলেন, দোকান খোলার আগে থেকেই কিছু কিছু ক্রেতা ঘুরে দোকান খুলবে কি না খবর নিয়ে যান। তিনি বলেন, কে বলেছে মানুষের হাতে টাকা নেই। এক শ্রেণীর মানুষের হাতে বর্তমানে প্রচুর টাকা। আর এক শ্রেণীর মানুষ নিঃস্ব। যাদের হাতে টাকা নেই, তারা দোয়া করছেন, ঈদের আগে যেন দোকান না খোলে। কারণ দোকান খুললেই স্ত্রী-সন্তানকে কিছু কিনে দিতে হবে। কিন্তু তার কাছে হয় তো সেই টাকা নেই। অপর এক শ্রেণীর মানুষের হাতে এত টাকা যে তারা দোকান কবে খুলবে সেই খবর নিতে কয়েকবার করে ঘুরে যান।