পি কে হালদারের গ্রামে রয়েছে শুধু টিনশেড ঘর 
বাংলাদেশ

পি কে হালদারের গ্রামে রয়েছে শুধু টিনশেড ঘর 

বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার মূল অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার ভারতে গ্রেফতার হয়েছেন। তার বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের দীঘিরজান গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত প্রণবেন্দু হালদারের ছেলে তিনি। ভারতে গ্রেফতারের খবরে যোগাযোগ করা হয় মাটিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বিলুর সঙ্গে। পি কে হালাদারের বাড়ি, শৈশব এবং বেড়ে ওঠার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় তার কাছে।

জাহিদুল ইসলাম বিলু বলেন, আমাদের এলাকায় অনেক গুণী জন্ম নিয়েছেন। তবে পি কে হালদারের জন্য দুর্নাম হয়েছে। তার বাড়ি যে আমাদের এলাকায়, এ পরিচয় দিতে এখন লজ্জা করে।

তিনি আরও বলেন,মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বাড়ি মাটিভাঙ্গা ইউনিয়নের তারাবুনিয়া গ্রামে। সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারের বাড়ি বরইবুনিয়া গ্রামে ও মাহামুদকান্দা গ্রামে বাড়ি সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর। এছাড়া ন্যাপের সাবেক সহ-সভাপতি ও বরিশাল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আ. সাত্তার মিয়ার বাড়িও বরইবুনিয়ায়। সেখানে পি কে হালদারের বিষয়টি আমাদের জন্য লজ্জার। 

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রণবেন্দু হালদার ছিলেন দর্জি। খুব একটা অবস্থা সম্পন্ন ছিলেন না তারা। এখন তারা অনেক অর্থবিত্তের মালিক। ঢাকায় ফ্ল্যাট-বাড়িসহ দেশ-বিদেশে রয়েছে তাদের অর্থ ও সম্পত্তি। সহযোগী সুকুমার মৃধার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের অশোক নগরে পি কে হালদার যে বেশ কয়েকটি বাড়ি ও বিপুল জমিজমা কিনেছেন,তার প্রমাণ ভারতের গোয়েন্দারা পেয়েছেন। তবে তার পৈতৃক ভিটায় রয়েছে শুধু একটি কাঠের টিনশেড ঘর। সেখানে তার চাচাতো ভাই দীপেন্দ্র নাথ হালদার পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। 

দীঘিরজান এলাকাবাসী জানান, পি কে হালদারের বাবা মৃত প্রণবেন্দু হালদার দীঘিরজান বাজারের একজন দর্জি ছিলেন। মা লীলাবতি হালদার ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। প্রশান্ত কুমার হালদার ১৯৮২ সালে দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। বাগেরহাটের সরকারি পিসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তিনি এরপর বুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি নিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের জুট ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। 

স্থানীয়রা আরও জানান,১৫-১৬ বছর আগে ভিন্ন ধর্মের এক নারীকে বিয়ে করার পর থেকে পি কে হালদার গ্রামছাড়া। তার অর্থপাচারের কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর শিক্ষিকা মা,আরেক ছেলে প্রীতিশ হালদারের বাড়ি ভারতের অশোকনগরে চলে গেছেন। পিকে হালদারের আরেক ভাই প্রানেশ হালদারও কানাডায় অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

এদিকে পি কে হালদারের গ্রেফতারের খবরে পিরোজপুরের নাজিরপুর এলাকায় তার আত্মীয়দের মধ্যে নতুন করে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্যের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে পি কে হালদারের গ্রামের বাড়িতে পুরনো একটি কাঠের টিনশেড ঘর আছে, যেখানে তার চাচাতো ভাই দীপেন্দ্র নাথ হালদার বসবাস ও দেখাশোনা করেন।

দীঘিরজান গ্রামে ওই বাড়িতে গেলে পি কে হালদারের চাচাতো ভাই দীপেন্দ্র নাথ হালদার ও তার ছেলে দ্বীপ হালদার জানান, তারা এই বাড়ি দেখেশুনে রাখছেন। কিন্তু প্রশান্ত বা তার ভাইয়েরা কেউ তাদের কোনও খোঁজ রাখেন না। তারা জানান, পিকে হালদারের কেলেঙ্কারির খবর শোনার পর তারা অনেক ভয় ও শঙ্কার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। 

অর্থ পাচারকারী প্রশান্তের গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী কলেজ শিক্ষক অধ্যক্ষ দীপ্তেন মজুমদার বলেন,প্রশান্ত হালদারকে একজন মেধাবী ছাত্র বলে এলাকাবাসী চিনতো। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সঙ্গে তার তেমন কোনও যোগাযোগ ছিল না। মানুষ জানতো প্রকৌশলী পেশায় তিনি অনেক বড় চাকরি করেন। ১৫-১৬ বছর আগে এক মুসলিম নারীকে বিয়ে করেছেন বলে গ্রামে খবর রটে। কুষ্টিয়ায় একটি জুট মিলসহ তার কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ছিল বলে মানুষ জানে।

এদিকে পি কে হালদার এলাকায় আসতেন কিনা জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, তিনি খুব কম আসতেন। এক যুগ আগে তাকে দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হয়। তবে একবার ম্যানেজিং কমিটির সভা চলাকালে পি কে হালদার সভার বাইরে থাকা এক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে অশালীন মন্তব্য করেন। পরে ওই ব্যক্তি সভার মধ্যেই পি কে হালদারকে থাপ্পড় দেন। এরপর থেকে পি কে হালদার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভায় আর যোগ দেননি।

জাহিদুল ইসলাম বিলু আরও বলেন, ভারতে আটক বাংলাদেশের হাজার কোটি টাকা পাচারকারী প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) ও কয়েকমাস আগে দুদকের হাতে গ্রেফতার হওয়া তার তিন সহযোগী অবন্তিকা বড়াল, সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধার বাড়িও নাজিরপুর উপজেলায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতার পৈত্রিক বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার শেখমাটিয়া ইউনিয়েনের বাকসি গ্রামে। সুকুমার মৃধার বাবা রাজেন্দ্রনাথ মৃধা একজন চৌকিদার ছিলেন। আটক পি কে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকা বড়াল ওরফে কেয়ার গ্রামের বাড়িও একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের আমতলা গ্রামে। পিরোজপুর শহরের খুমুরিয়া এলাকায় তাদের একটি বাড়ি রয়েছে। অবন্তিকার বাবা ছিলেন পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রভাষক মুক্তিযোদ্ধা অরুণ কুমার বড়াল। এছাড়া অঙ্গন হালদার নামে নিজ গ্রামের এক লোক ম্যানেজার হিসেবে পি কে হালদারের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করেন। তিনি দীঘিরজান গ্রামে মা লীলাবতীর নামে একটি কলেজও প্রতিষ্ঠা করেন। তারও তত্ত্বাবধায়ক অঙ্গন হালদার।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার মূল অভিযুক্ত পি কে হালদারকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে আদালতে তুলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) নিজেদের হেফাজতে নেয়। শনিবার (১৪ মে) দুপুরে পি কে হালদারসহ মোট ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে,পশ্চিমবঙ্গে এক অভিযানে আলোচিত পি কে হালদারসহ ছয় জন গ্রেফতার হন। 

Source link

Related posts

যারা ইয়াবার সঙ্গে যুক্ত, আ.লীগে তাদের দরকার নেই: হাছান মাহমুদ

News Desk

বাজেট ঘাটতি পূরণে ধারদেনা করব : পরিকল্পনামন্ত্রী

News Desk

আন্তর্জাতিক মহড়ায় অংশ নিতে মোংলা ছাড়লো যুদ্ধ জাহাজ ওমর ফারুক

News Desk

Leave a Comment