বগুড়ার ধুনটের মুজিব চত্বরের পুকুরে আলোকসজ্জার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিশাল আকারের জাতীয় পতাকা। ধুনট উপজেলা প্রশাসন গত ১৫ দিন ধরে মজা পুকুরটির সংস্কার করে জাতীয় পতাকার অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জলতরঙ্গে বিজয় নিশান’।
শনিবার (২৬ মার্চ) রাতে ‘জলতরঙ্গে বিজয় নিশান’ সর্বস্তরের জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর মুজিব চত্বরটি শত শত দর্শনার্থীতে ভরে যায়। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ প্রদর্শনী চলবে।
রাতেই বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান, জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক ও অন্যান্য কর্মকর্তারা পরিদর্শন শেষে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
এর অন্যতম উদ্যোক্তা ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত ও পৌর মেয়র এ জি এম বাদশাহ জানান, ১৫ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমে পুকুরের ওপরে সুতার সঙ্গে ৯২ হাজার ৩৪০টি লাল-সবুজ বাতি বেঁধে জাতীয় পতাকার অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পতাকাটি দৈর্ঘ্য ১৬০ ও প্রস্থ ৯৬ ফুট।
তারা আরও জানান, পুকুরের চার কোণায় এবং পাড়ে সরকারের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ তুলে ধরা হয়েছে। মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ফ্লাইওভারের প্রতিকৃতি বসানো হয়েছে। পুকুরে মাঝ বরাবর ওপরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ শোভা পেয়েছে। মানুষ যেন এখানে এসে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে পারে সে জন্য পশ্চিম প্রান্তে বড় ছবির পাশে ইংরেজিতে ‘আই লাভ বঙ্গবন্ধু’ এবং পূর্ব প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির পাশে ‘দ্য মাদার অব হিউম্যানিটি’ লেখা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দক্ষিণ পাশে স্থাপন করা হয়েছে ১০০ ফুট দৈর্ঘ্যের নৌকা। নৌকার পূর্ব পাশে বঙ্গবন্ধু এবং পশ্চিম পাশে শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু দেশ নিয়ে চিন্তা করছেন ও তার কন্যা দেশের হাল ধরেছেন এমন মর্মার্থ তুলে ধরা হয়েছে।
‘জলতরঙ্গে বিজয় নিশান’ দেখতে আসা ধুনটের গোসাইবাড়ির চিতুলিয়া গ্রামের আমজাদ ফকির জানান, গত কয়েকদিনে মজা পুকুর খনন ও সংস্কার করে উপজেলা প্রশাসন আলোকসজ্জার বাতির মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যা খুব প্রশংসার দাবি রাখে। গত কয়েকদিনে কেউ ভাবতেও পারেনি এত সুন্দর কিছু হচ্ছে। রাতে বাতি জ্বলার পর বিষয়টি সবার নজরে আসে।
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন ধুনটের মাস্টারপাড়ার আসাদুর রহমান। তিনি জানান, আলোকসজ্জার বাতি দিয়ে এত সুন্দর ও বড় জাতীয় পতাকা তৈরি হবে বা কখনও ভাবতে পারেননি। তিনি এ কর্মকাণ্ডে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত জানান, প্রতি বছর স্বাধীনতা, বিজয় দিবসসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়। তিনি গুগল সার্চ করে নতুন কিছু করার চিন্তা করেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে আমাদের অহংকারের প্রতীক জাতীয় পতাকাকে আলাদাভাবে প্রকাশ করার উদ্যোগ নেন। সবার সহযোগিতায় গত ১৫ দিনের চেষ্টায় মুজিব চত্বরের মজাপুকুর সংস্কার করে সেখানে বাতির আলো দিয়ে পতাকা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখানে কোনও খুঁত রাখা হয়নি।
তিনি আরও জানান, কোনও পুরস্কার বা কাউকে খুশি করার জন্য তিনি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেননি। বঙ্গবন্ধু ও দেশ মাতৃকার টানে কাজটি করেছেন।
বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক মহৎ এ কাজের জন্য ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে জানান, এটি ইন্সটলেশন আর্টের মর্যাদা পেয়েছে; বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে।
বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান জানান, তিনি এ কাজে বিস্মিত হয়েছেন। বগুড়ার শেরপুরে শষ্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু যেমন সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল; তেমনি ‘জলতরঙ্গে বিজয় নিশান’ও আলোচনায় স্থানলাভ করবে। এ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।