রাজশাহীতে পুলিশের টহল টিমের গাড়ির ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (৩১ জুলাই) বিকাল ৩টার দিকে নগরীর মহিষবাথান এলাকায় রাজপাড়া থানা-পুলিশের টহল টিমের একটি পিকআপ লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১৫ জনকে আটক করে।
পুলিশ জানায়, কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বুধবার রাজশাহীর আদালতের সামনে সমাবেশ করার একটি তথ্য ছিল। এ জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আদালত চত্বর ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিকাল পৌনে ৩টার দিকে মহিষবাথান এলাকার একটি গলি সড়কের ভেতর দিয়ে পুলিশের টহলে থাকা গাড়িটি আসছিল। এ সময় দুর্বৃত্তরা গাড়িটি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে কোনও পুলিশ সদস্য আহত না হলেও গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙে যায়। এ সময় আত্মরক্ষায় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ এসে দুর্বৃত্তদের ধরতে অভিযান শুরু করে। বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৫ জনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়।
রাজপাড়া থানার ওসি রফিকুল হক জানান, জেলা প্রশাসনের কার্যালয় ঘরে বিক্ষোভ করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে এ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। সেখানে গাড়ি সরু রাস্তার মধ্যে দিয়ে আসছিল। এ সময় দৃর্বৃত্তরা হামলা করে গাড়ি ভাঙচুর করে।
রাজপাড়া থানার ওসি রফিকুল হক আরও জানান, এই ঘটনায় ১৫ জনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, আন্দোলনের ছবি-ভিডিও পোস্ট করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৯ জুলাই) নগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকা থেকে কয়েকজন সাদা পোশাকধারী তাকে তুলে নিয়ে যান। পরে বিস্ফোরণ মামলায় তাকে আদালত চালান করে মতিহার থানা পুলিশ।
রাবির সাবেক ওই শিক্ষার্থীর নাম রাশেদ রাজন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগ থেকে পড়ালেখা শেষ করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাজন ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি টানা পাঁচ বছর ক্যাম্পাস লাইভে কর্মরত ছিলেন।
রাশেদ রাজনের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, সোমবার সারা দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে রাবির শিক্ষার্থীরা ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এমন ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন রাশেদ রাজন। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও পোস্ট করায় তাকে ডিবি পরিচয়ে নগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকা থেকে তুলে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) তাকে আদালতে চালান দেয় পুলিশ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ছাত্রদের আন্দোলন পুরো দেশব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। সে জায়গা থেকে অনেকেই আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছেন। আবার যারা সরাসরি যুক্ত হতে পারছেন না, তারা অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের ছবি-ভিডিও পোস্ট করে নিজে প্রতিবাদ করছেন। রাশেদ রাজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে নিজেও দেশজুড়ে গণহত্যার প্রতিবাদ করছিলেন। আমরা তার গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে মতিহার থানার ওসি শেখ মোবারক পারভেজ বলেন, রাশেদ রাজন নামের ওই শিক্ষার্থীকে ডিবি পুলিশ আটক করেছিল। পরে মতিহার থানায় পাঠানো হলে তাকে আদালতে চালান করা হয়। বিস্ফোরক মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।