পুলিশ বাধা দিলেও ফরিদপুরে ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ’ ভাঙচুর
বাংলাদেশ

পুলিশ বাধা দিলেও ফরিদপুরে ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ’ ভাঙচুর

ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে এক্সকেভেটর দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ’ ভেঙে দিয়েছে কিছু মানুষ। তবে ঘটনাস্থলে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ভাঙচুরে অংশ নিতে দেখা যায়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌরসদরের চৌরাস্তায় স্বাধীনতা চত্বরে নৌকায় বসা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল সংবলিত স্মৃতিস্তম্ভটি একটি এক্সকেভেটর (ভেকু) দিয়ে আংশিক ভাঙচুর করা হয়। এ সময় বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিক্ষুব্ধ জনতাদের উল্লাস করতে দেখা যায়।

এর আগে ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করলে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভটি আংশিক ভাঙচুর করে ছাত্র-জনতা। 

ভাঙচুরের খবর পেয়ে বোয়ালমারী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ কয়েকজন আওয়ামী লীগ বিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষুব্ধরা ভাঙচুর চালিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশপাশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে চলে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে তৎকালীন ফরিদপুর-১ সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান শহরটির সৌন্দর্য বর্ধন ও স্বাধীনতা সংগ্রামের স্মৃতি সংরক্ষণে পৌর সদরের প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তায় স্বাধীনতা স্তম্ভটি নির্মাণের প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন। স্থানীয় সরকার সরকারের অর্থায়নে ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ শেষে প্রকল্পটি নাম দেওয়া হয় ‘বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ’।

ভাঙচুরের নেতৃত্ব দেওয়া ‘জিয়া প্রজন্ম দলের’ সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী জাকারিয়া বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ভাইদের রক্তের দাগ এ মাটিতে এখনও শুকায়নি। অথচ পালিয়ে যাওয়া খুনি হাসিনা ভারতের মাটিতে বসে এ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এলাকার মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অনলাইনে ভাষণ দেওয়ার দুঃসাহসের প্রতিবাদে এই ভাঙচুর করা হয়েছে।’

উপজেলা ছাত্রদলের নেতা দাবি করে প্রবাস ফেরত দাদপুর গ্রামের বাসিন্দা বোরহান হোসাইন বলেন, ‘আমরা এ দেশের মাটিতে ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া শেকড় উপড়ে ফেলবো। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ছায়াও এ দেশে রাখবো না। যদি কোনও শক্তি ফ্যাসিস্টের পক্ষ নেয় তাকেও উপড়ে ফেলা হবে। আওয়ামী লীগের কোনও স্থাপনা দেশে রাখা হবে না। প্রয়োজনে আমরা লংমার্চ টু টুঙ্গিপাড়া কর্মসূচি নেবো।’

ভাঙচুরে অংশগ্রহণ করা একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাঙচুরের পর এখানে দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে একটি সৌন্দর্য বর্ধনকারী স্থাপনা নির্মাণ করার দাবি জানাচ্ছি।’

এক্সেভেটরটি (ভেকু) কোথায় থেকে আনা হয়েছে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে এক পর্যায়ে জানা গেছে, বোয়ালমারী পৌর বাজারের ওয়াবদা মোড়ের জর্জ একাডেমি মার্কেটের ব্যবসায়ী উপজেলার লংকারচর গ্রামের বাসিন্দা ভজন চৌধুরীর। এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে ভজন চৌধুরী বলেন, ‘আমাকে গত রাতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহা এক্সেভেটরটি ভাড়ার জন্য ফোন করেন। তারপর আজ সকালে আমার ড্রাইভার (এক্সেভেটরের চালক) শামীম চৌরাস্তায় গিয়ে স্থাপনাটি আংশিক ভেঙে চলে এসেছে।’

আপনারা কী আবার ভাঙবেন কি না এমন প্রশ্নে জবাবে চালক শামীম বলেছে, ‘এটা এক্সকেভেটর দিয়ে পুরোপুরি ভাঙা যাবে না।’

তবে বোয়ালমারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় সাহা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় আছি। আমি তো ভজন নামে কাউকে চিনি না। আর আমি কেন ওইটা (বঙ্গবন্ধু স্মৃতিস্তম্ভ) ভাঙতে যাবো? এটা সম্পন্ন ভুল কথা আপনারা শুনেছেন।’

ভাঙচুরের সময় ঘটনাস্থলে যাওয়া থানার এসআই শরীফ আব্দুর রশিদ বলেন, ‘ওসি স্যারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থাপনাটি ভাঙচুরকালে প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে স্থাপনাটি ভাঙচুর নিবৃত করার চেষ্টা করি। সেখানে অংশ নেওয়া বিক্ষুব্ধদের বাধা দিতে গেলে তারা (ভাঙচুরে অংশ নেওয়া লোকজন) বলেন, শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া কিছুই আমরা রাখবো না। সেখানে জাকারিয়া নামে এক ছাত্রদল নেতাকে বিষয়টি বললে তারা উপরে লাগানো টাইলসগুলো ভেঙে চলে যায়।’

বোয়ালমারী থানা ওসি মোহাম্মদ গোলাম রসুল বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি।’ অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দেশে কোনও স্থাপনা ভাঙচুর না করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বিষয়টি অবগত করলে ওসি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভাঙচুরের বিষয়টি জানানো হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওখানে স্থানীয় গণ্যমান্যদের সঙ্গে কথা বলে সৌন্দর্য বন্ধনের জন্য ভালো কিছু করা হবে।’

Source link

Related posts

বান্দরবানে রিসোর্ট ম্যানেজার ও কর্মীদের হামলায় ৩ পর্যটক আহত

News Desk

অবৈধ অভিবাসন: লিবিয়ার উপকূলে আটক বাংলাদেশিদের অর্ধেকই ফেরত আসতে চান না

News Desk

ভোলার বেতুয়া প্রশান্তি পার্কের প্রধান সড়ক ভেঙে গেছে

News Desk

Leave a Comment