পূর্বাচলে অবৈধ বিলবোর্ডে কোটি টাকার বাণিজ্য
বাংলাদেশ

পূর্বাচলে অবৈধ বিলবোর্ডে কোটি টাকার বাণিজ্য

অবৈধ বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশ। অবৈধভাবে এসব বিলবোর্ড স্থাপন করে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থা। এতে বিলবোর্ড ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন পথচারী ও ব্যবসায়ীরা।

অভিযোগ রয়েছে, এসব বিলবোর্ড দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রের সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক নেতাও জড়িত। তবে এদের কারও বিরুদ্ধে কোনও ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়কের সাড়ে ছয় কিলোমিটার রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নির্মাণাধীন পূর্বাচল নতুন শহরের মধ্যে পড়েছে। বিগত বছরগুলোতে রাজউক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ৫০টির অধিক বিলবোর্ড স্থাপন করেছেন। এগুলো দখল করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময়ে ঝড়ের মৌসুমে কয়েক স্থানে সড়কের ওপর বিলবোর্ড ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবু কোনও ব্যবস্থা নেয়নি রাজউক। পরবর্তী সময়ে সড়কের দুই পাশে নতুন নতুন বিলবোর্ড টাঙানো হলেও উচ্ছেদ অভিযান চালায়নি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। এর ফলে পূর্বাচলের সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাজউক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অবৈধভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ব্যতীত শপসাইন, প্রজেক্ট সাইন, সাইনবোর্ড ও ব্যানার ইত্যাদি ব্যবহার করছে। পুরো সড়কের দুই পাশ দখলে রেখেছে এসব বিলবোর্ড।

বিলবোর্ড স্থাপন করা কয়েকজনের কথা বলে জানা গেছে, এসব বিলবোর্ড স্থাপন করতে হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। নিজ দায়িত্বেই বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে রাজউক থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু কোনও অনুমতি না নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের মদতে এগুলো স্থাপন করা হয়েছে। এতে কিছু টাকা পাওয়া যায়। তবে রাজউক চাইলে যেকোনও সময় ভেঙে ফেলতে পারে বিলবোর্ডগুলো।

পূর্বাচলের কয়েকজন বাসিন্দা ও দুজন বিলবোর্ড ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, পূর্বাচল নতুন শহরে প্রবেশের জন্য নির্মিত হয়েছে ১৩ কিলোমিটার কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড (পূর্বাচল তিনশো ফিট) সড়ক। বিশ্বরোড থেকে সড়ক দিয়ে যাতায়াতের পথে পূর্বাচল নতুন শহরের প্রবেশমুখ ১ নম্বর সেক্টর বালু নদীর সেতু থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত দুই পাশে শত শত বিলবোর্ড ঝুলছে। বিগত সরকারের আমলে উপজেলার ভোলাব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ বিলবোর্ড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন খান, আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসেন, তৈইবুর রহমান, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ভূঁইয়াসহ দলীয় নেতারা রাজউক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সড়কের উভয় পাশ ছাড়াও বিভিন্ন সেক্টরে অর্ধশতাধিক বিলবোর্ড স্থাপন করেন। প্রতিটি বিলবোর্ড সাইজ অনুপাতে বছরে পাঁচ-সাত লাখ টাকায় বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থাকে বিজ্ঞাপনের জন্য ভাড়া দেন তারা। ওই অর্থ নিজেরাই ভাগ করে নেন। রাজধানীতে বিলবোর্ড বসালে রাজউককে নির্দিষ্ট হারে মাসিক অথবা বাৎসরিক একটি ফি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও দেওয়া হয়নি। ফল বিগত কয়েক বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে সরকার, এখনও হারাচ্ছে। 

বিলবোর্ড ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন পথচারী ও ব্যবসায়ীরা

এদিকে, এসব বিলবোর্ড যাতে কেউ না সরায়, তা দেখাশোনার জন্য প্রতিটি বিলবোর্ড বাবদ মাসিক কিংবা বাৎসরিক ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্রকে দিয়ে আসছে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো।

পূর্বাচলের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাতের আঁধারে কোনও নিয়ম না মেনে এসব বিলবোর্ড স্থাপনের কারণে প্রায় সময় ভেঙে পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। যাতায়াতের সময় আতঙ্কে থাকি। এগুলো কখন যে কার ওপর ভেঙে পড়ে, তা নিয়ে সবসময় ভয়ে থাকেন এই সড়কে যাতায়াতকারীরা।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভোলাব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ বিলবোর্ড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কের দুই পাশের বিলবোর্ডগুলো রাজউকের অনুমতি ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে। তবে পূর্বাচলের প্লটের ভেতরে যেসব বিলবোর্ড টাঙানো হয়েছে, সেগুলো প্লট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে বসানো হয়েছে। এগুলো দেখাশোনার জন্য স্থানীয় নেতাদের বাৎসরিক ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো এই অর্থ দেয়।’

এসব বিলবোর্ড দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র

এসব অবৈধ বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ড অপসারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে বলে জানালেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১ নম্বর সেক্টরের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন) ও প্রকল্প পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে রাজউকের অনুমতি না নিয়েই একটি চক্র পূর্বাচলের কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কে অবৈধভাবে বিলবোর্ড স্থাপন করেছে। গত মাসে বিলবোর্ড অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা তাদের বিলবোর্ডগুলো নিজেরাই খুলে নিয়ে যাবে মর্মে ১০ দিন সময় চেয়ে রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন। কিন্তু সেসময়ের মধ্যে সরাননি তারা। শিগগিরই এগুলো অপসারণে উচ্ছেদ অভিযান চালাবে রাজউক।’  

কোনও ব্যবস্থা নেয়নি রাজউক

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২৬ মে রাজধানীর পূর্বাচলে সরকারি আবাসিক প্রকল্পের আশপাশে অনুমোদন ছাড়া গড়ে ওঠা অবৈধ বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল। সেইসঙ্গে সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড অপসারণের পাশাপাশি এসব অবৈধ আবাসন প্রকল্প বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রাজউক চেয়ারম্যান এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু এর কোনোটি আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

Source link

Related posts

পানি কমেছে ফেনী সদরে, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে প্রয়োজন মানবিক সহযোগিতা

News Desk

পাহাড়ধসের শঙ্কা: বারবার বললেও আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে অনীহা

News Desk

আ.লীগ নেতার পদত্যাগ দাবি করে স্ট্যাটাস, যুবক কারাগারে

News Desk

Leave a Comment