Image default
বাংলাদেশ

পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ৮টি মুসলিম দেশ

মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নানা সময়ে শিকার হয়েছে অপশক্তির। তাদের অধিগ্রহণে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে শুরু করে লুট হয়েছে রাজ্যক্ষমতা পর্যন্ত। সব শেষ বড় আকারে মুসলিম রাষ্ট্রের অধঃপতন ঘটে সাদ্দাম হোসেনের রাজত্ব হটানো দিয়ে। এরপর বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশ আগ্রাসনের শিকার হয়। এ কারণে মুসলিম দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতকে শক্তিশালী করতে তৎপর হয়ে ওঠে। সামরিক শক্তিতে অত্যাধুনিক অস্ত্রের সঙ্গে যোগ হয় সেনাদের শৃঙ্খলা, মনোবল এবং যুদ্ধ সক্ষমতা। পৃথিবীর বেশিরভাগ মুসলমান দেশ যথেষ্ট ধনী এবং খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। কিন্তু পৃথিবীতে এমন অনেক মুসলিম দেশ আছে যাদের চ্যালেঞ্জ করা বিশ্বের অধিকাংশ দেশগুলোর জন্য কঠিন হতে পারে।এই তালিকায় সৌদি আরব, তুরস্ক, মিসর, ইরানের পাশাপাশি বাংলাদেশের নামও রয়েছে।বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর শক্তি নিয়ে আজকের আলোচনা।

পাকিস্তান :

চলতি বছরে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় পাকিস্তানকে। মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এটি। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। অপরদিকে রিজার্ভ আর্মি আছে আরো পাঁচ লাখের বেশি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভ করা এই দেশটির মোট জনসংখ্যা ১৮০ মিলিয়ন।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী
চলতি বছরে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম দেশ পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ; ছবি : banglatelegraph

দেশটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতেও অন্য মুসলিম দেশগুলোর চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে। সেনা, নৌ, বিমান, মেরিন, আধাসামরিক এবং এসপিডি বাহিনীর সমন্বয়ে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী গঠিত। পাকিস্তানের রয়েছে ৪ হাজার সাঁজোয়া ট্যাংক, ৪ টি ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ, ১৪ টি ফ্রিগেট, ৮ টি করভেট যুদ্ধজাহাজ, ২৮ টি পেট্রোল বোট, ৮ টি সাবমেরিন, ৩২৫ টি যুদ্ধবিমান, ৩০ টি বোমারু বিমান, ২৫০ টি জঙ্গি বিমান, ১১০ টি সাঁজোয়া হেলিকপ্টার এবং ১১০-১২০টি পরমাণু অস্ত্র। প্রতি অর্থবছরে পাকিস্তানের সামরিক বাজেট থাকে প্রায় ৭.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি দেশটির জিডিপির ২.৭ শতাংশ।

তাছাড়া পাকিস্তানের রয়েছে শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিশ্বব্যাপী পাকিস্তানের এই গোয়েন্দা সংস্থা ‘আইএসআই’ নামে পরিচিত। পাকিস্তানি অস্ত্র ভাণ্ডারের প্রায় ৮০ শতাংশ চীন থেকে আমদানি করা হয়। একসময় আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো থেকেও বিপুল অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করত পাকিস্তান।

তুরস্ক :

সামরিক সক্ষমতায় পাকিস্তানের পরই রয়েছে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ তুরস্ক। তুর্কি সামরিক বাহিনীর বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৪ লাখ ১০ হাজার। আর রিজার্ভ সদস্য রয়েছে আরও এক লাখ ৭৮ হাজার ৭০০ জন। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যসংখ্যা এক লাখ ৫২ হাজার। সব মিলিয়ে দেশটির বর্তমান সামরিক জনশক্তি ৭ লাখেরও বেশি।

তুরস্ক
তুরস্কের বর্তমান সামরিক জনশক্তি ৭ লাখেরও বেশি ; ছবি : quora

তুরস্কের সেনাবাহিনীর রয়েছে নিজস্ব বিমান, নৌ ও পুলিশিং ইউনিট। দেশটির সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ট্যাংক তিন হাজার ৭৭৮টি, আর্মারড ফাইটিং ভেহিকেল (এএফভি) সাত হাজার ৫৫০টি, স্বচালিত কামান (এসপিজি) এক হাজার ১৩টি, ভ্রাম্যমাণ কামান (টিএ) ৬৯৭টি, বহুমুখী রকেট ব্যবস্থা (এমএলআরএস) ৮১১টি। বিমান বাহিনীর অধীনে রয়েছে ৯টি যুদ্ধবিমান ঘাঁটি।

এ ছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ও ড্রোন ঘাঁটিসহ রয়েছে আরও ১১টি ঘাঁটি ও ৪১টি সোয়াড্রন, বিমানসংখ্যা এক হাজার ৭টি, যুদ্ধবিমান ২০৭টি, প্রশিক্ষণ বিমান ২৭৬টি, হেলিকপ্টার ৪৪৫টি, সামরিক হেলিকপ্টার ৬৪টি। এ ছাড়া তুরস্কের উল্লেখযোগ্য যুদ্ধবিমানের মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এফ ১৬ ফ্যালকন। তাদের আছে ইসরায়েলের তৈরি মনুষ্যবিহীন ১০টি বিমান আইএআই হিরন।

ইরান :

ইসলামী বিপ্লবের পর বেশিরভাগ সময় পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার খড়গ মাথার উপর থাকলেও মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের সামরিক শক্তি ঠিকই উল্লেখ করার মতো। ইরানের ১৯ বছর বয়সী নাগরিকদের সবারই দীর্ঘ ১৮ মাসের সেনা প্রশিক্ষণ নেয়া বাধ্যতামূলক। ইরানি সেনাবাহিনীর রয়েছে এক হাজার ৬৫৮টি ট্যাংক। এর মধ্যে ১০০টিই ইরানের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি। দেশটির সামরিক শক্তির মধ্যে রয়েছে আট হাজার ১৯৬টি পৃথক আর্টিলারি ডিভিশন সৈন্য। দুই হাজার ১০টি টানা আর্টিলারি ও ৮০০টি স্ব-নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র।

ইরান
ইরানের সেনাবাহিনীর ব্যাবহৃত অস্ত্র ; ছবি : informer

তাছাড়া দেশটির রয়েছে ২০০টি রকেট সিস্টেম, পাঁচ হাজার মর্টার এবং এক হাজার ৭০১টি বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র। ইরানের আরো রয়েছে এক হাজার ৩১৫টি অত্যাধুনিক আরমার্ড ফাইটিং ভেহিকেল। নৌবাহিনীর মোট জাহাজ ৩৯৭টি, বাণিজ্যিক জাহাজ ৭৪টি, ফ্রিগেট ওয়ারশিপ ১২টি, করভেট যুদ্ধজাহাজ ৩টি, কোস্টাল ডিফেন্স জাহাজ ১১১টি ও সাবমেরিন ৩৭টি।

বিমান বহরে ইরানের রয়েছে প্রায় ৫০০টি বিমান। মিসাইল শক্তির দিক দিয়েও পিছিয়ে নেই দেশটি। ইরানের দূরপাল্লার বা স্বল্পপাল্লার শক্তিশালী প্রায় ১ হাজারের বেশি মিসাইল রয়েছে। ইরানের এই মিসাইল শক্তি ইসরায়েলের যে কোনো স্থান ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো স্থানে হামলা করাসহ পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত হামলা করতে সক্ষম।

মিশর :

সামরিকভাবে শক্তিশালী মিসর প্রতিরক্ষা ট্যাংকসহ মাঝারি আকারের অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণ করে। যুদ্ধের চেয়ে প্রতিরক্ষা বিষয়ে দেশটির আগ্রহী বেশি। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার র‌্যাংকিংয়ে সামরিক শক্তিতে মিসরের অবস্থান দশম। মিসরের সশস্ত্র বাহিনী ১৮২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশটির মোট জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ কোটি। সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা চার লাখ ৫৪ হাজার ২৫০ জন এবং রিজার্ভ সৈন্যের সংখ্যা আট লাখ ৭৫ হাজার জন।

মিসর
আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহিনী ; ছবি : britmodeller

মিশরের সামরিকবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত আছে মেইন ব্যাটল ট্যাংক, লাইট ট্যাংক, ট্যাংক ডেস্ট্রয়ার, আরমার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার এবং ইনফেন্ট্রি ফাইটিং ভেহিক্যাল। মিশরের প্রধান যুদ্ধ ট্যাংক আছে চার হাজর ১১০টি, আরমার্ড ফাইটিং ভেহিক্যাল ১৩ হাজার ৯৪৯টি, স্ব-চালিত বন্দুক আছে ৮৮৯টি, টাওয়েড আর্টিলারি দুই হাজার ৩৬০টি, মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম রয়েছে এক হাজার ৪৮১টি। মিশরের বিমানবাহিনী হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী বিমানবাহিনী। মিশরের বিমানবাহিনীতে রাশিয়ান, আমেরিকান ও ফ্রেঞ্চসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান অন্তর্ভুক্ত। তাদের মোট বিমান সংখ্যা এক হাজার ১৩২টি, ফাইটার ৩৩৭টি, ফিক্সড উইং এটাক ৪২৭টি, পরিবহন বিমান ২৬০টি, প্রশিক্ষণ বিমান ৩৮৪টি, হেলিকপ্টার ২৫৭টি, অ্যাটাক হেলিকপ্টার ৪৬টি।

মিশরের সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনীও বেশ শক্তিশালী। মিশরের নৌবাহিনীতে ২টি হেলিকপ্টারবাহী যুদ্ধজাহাজ আছে। এ ছাড়াও অত্যাধুনিক ফ্রিগেট রয়েছে। করভেট আছে ২টি,সাবমেরিন ৫টি, কোস্টাল ডিফেন্স ক্রাফট ২২৭টি, মাইন ওয়ারফেয়ার আছে ২৩টি।

মরক্কো :

মরক্কোর প্রায় ৩৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা মুসলিম। দেশটির মাত্র ১ শতাংশ জনগণ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। সামরিক শক্তিতে মুসলিম দেশের মধ্যে মরক্কো রয়েছে বেশ অনেকটাই এগিয়ে। দেশটির আছে একটি শক্তিশালী বিমানবাহিনী। দেশটির সামরিকবাহিনীতে মোট সেনাসদস্যের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ।

সেনাবাহিনীর অধীনে আছে প্রয়োজনীয় ব্যাটেল ট্যাংক, লাইট ট্যাংক এবং যুদ্ধযান। কমব্যাট ট্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ২৭৬টি, আর্মড ফাইটিং যান রয়েছে দুই হাজারের ওপরে, সেলফ প্রোপেলড আর্টিলারি ৪৪৮টি, টোয়েড আর্টিলারি ১৯২টি এবং রকেট প্রজেক্টর রয়েছে ৭২টি।

মরোক্কোর বিমানবাহিনীও অনেক সমৃদ্ধ
মরোক্কোর বিমানবাহিনীও অনেক সমৃদ্ধ ; ছবি : flickr

একইভাবে বিমানবাহিনীও অনেক সমৃদ্ধ। তাদের মোট বিমান ২৮৪টি। এর মধ্যে ফাইটার বিমান ৫৬টি, অ্যাটাক বিমান ৫৬টি, ট্রান্সপোর্ট বিমান ১১৬টি, ট্রেইনার বিমান ৮০টি এবং হেলিকপ্টার আছে ১৩০টি। নৌশক্তিতেও পিছিয়ে নেই মরক্কো। তাদের নৌবাহিনীর রয়েছে নিজস্ব হেলিকপ্টারবাহী যুদ্ধজাহাজ। বিশ্বের দরবারে তাদের এই সক্ষমতা যথেষ্ট সম্মানের সাথেই বিবেচনা করা হয়। মরক্কোর রয়েছে নিজস্ব সাবমেরিন। শুধু তাই নয় সাবমেরিনগুলো ডিজেল এবং বিদ্যুত্চালিত। এগুলো কনভেনশনাল আঘাত ও পারমাণবিক আঘাতে পারদর্শী। তাদের মোট নৌসম্পদ আছে ১২১টি। এর মধ্যে ফাইটার ৬টি, করভেটস ১টি, পেট্রোল ক্রাফটস ২২টি।

এ ছাড়াও দেশটি প্রাকৃতিক শক্তিতে সমৃদ্ধ। তাদের যে পরিমাণ মজুদকৃত তেল আছে তা অনেক বড় ধরনের সাপোর্ট বলে মনে করা হয়। এটাকে তাদের জীবনীশক্তি হিসেবে দেখা হয়। যুদ্ধাস্ত্রে ব্যবহৃত যে কোনো ধরনের তেল দেশটির কাছে আছে। পাশাপাশি দেশটিতে প্রতিদিন ১৬০ ব্যারেল তেল উত্তোলন করা হয়।

সৌদি আরব :

ঐতিহাসিকভাবে তেলসমৃদ্ধ একটি দেশ সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের এই রাজতন্ত্র রাজনৈতিক এবং সামরিক ইস্যুতে দৃশ্যত কিছু দূরত্ব বজায় রাখে। অথচ বিশ্বের একমাত্র দেশ এটিই যারা অস্ত্র আমদানিতে সর্বোচ্চ অর্থ ব্যয় করে থাকে।

দেশটিতে এমন কিছু অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র রয়েছে যেগুলো মার্কিন সেনাবাহিনীতেও প্রচলন হয়নি। সৌদি আরবের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসংখ্যা ২ লাখ ৫১ হাজার ৫০০। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর পাশাপাশি রয়েছে এয়ার ডিফেন্স, স্ট্র্যাটেজিক ফোর্স ও ন্যাশনাল গার্ড নামে পৃথক বাহিনী। আকাশপথে শত্রুর মোকাবিলার জন্য ফাইটারসহ হামলা চালাতে সক্ষম এমন বিমান রয়েছে চার শতাধিক। সামরিক হেলিকপ্টার ২২৭টি, প্রশিক্ষণ বিমান রয়েছে ২৪৩টি।

সৌদি আরব
সৌদি আরবের ট্যাংক ; ছবি : presstv

স্থলযুদ্ধের জন্য আছে এক হাজর ১৪২টি ট্যাংক, সাঁজোয়া যান আছে ৫ হাজার ৪৭২টি, অটোমেটিক ও সাধারণ কামান মিলে রয়েছে মোট ৯৫৪টি। এ ছাড়া রকেট প্রজেক্টর আছে ৩২২টি। সামরিক নৌযানের মধ্যে সৌদি আরবের রয়েছে ৭টি ফ্রিগেট, ৪টি করভেটস, ১১টি টহল সামরিক জাহাজ ও ৩টি মাইন অপসারণ যান।

সৌদি আরবের অর্থনীতি মূলত তেলনির্ভর। দেশটির জাতীয় বাজেটের ৭৫ শতাংশ এবং রফতানি আয়ের ৯০ শতাংশ আসে তেল থেকে। সমগ্র বিশ্বের ভূগর্ভের অভ্যন্তরে খনিজ তেলের যে মজুদ রয়েছে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগই সৌদি আরবে, পরিমাণে যা ২৬ হাজার কোটি ব্যারেল। তেল ছাড়াও দেশটির রয়েছে গ্যাস ও স্বল্পপরিসরের স্বর্ণখনি।

ইন্দোনেশিয়া :

বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত ইন্দোনেশিয়া। দেশটির ৮৮ শতাংশ মানুষ মুসলিম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে রয়েছে ছোট বড় প্রায় ১৩ হাজারের অধিক দ্বীপ। সামরিক দিক থেকে মুসলিম দেশ হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান বেশ সম্মানজনক স্থানে রয়েছে। দেশটি নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ অস্ত্র দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি ও ইংল্যান্ড থেকে ক্রয় করে থাকে। পাশাপাশি নিজস্ব প্রযুক্তিতে দেশেও অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন করে থাকে। ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনী প্রধান ব্যাটল হিসেবে অত্যাধুনিক লিওপার্ড ট্যাংক ব্যবহার করে।

এ ছাড়াও পানিসীমার আয়তন বেশি হওয়ায় উন্নতমানের ফ্রিগ্রেট, সাবমেরিন, পেট্রোল ভেসেল রয়েছে দেশটির। ইন্দোনেশিয়ার সামরিকবাহিনী অত্যন্ত আধুনিক। ইন্দোনেশিয়ার মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৬ কোটি। সার্ভিসের জন্য উপযুক্ত প্রায় ১১ কোটি।

ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়া নিজস্ব প্রযুক্তিতে অস্ত্রশস্ত্র উৎপাদন করে ; ছবি : wowshack

দেশটির সামরিক বাহিনীর সক্রিয় সেনা সংখ্যা চার লাখ ৭৬ হাজার এবং রিজার্ভ সেনা রয়েছে চার লাখ। ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীতে ট্যাংক ৪১৮টি, আরমার্ড ফাইটিং ভেহিক্যাল এক হাজার ৮৯টি, সেলফ প্রপেলড গান ৩৭টি, ওয়েড আর্টিলারি ৮০টি, মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম ৮৬টি। দেশটির বিমানবাহিনী এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী বিমানবাহিনী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয় পরাশক্তির কাছে থেকেই যুদ্ধবিমান কেনে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির কাছে মোট যুদ্ধবিমান ৪২১টি, ফাইটার ৩৯টি, ফিক্সড উইং অ্যাটাক ৫৮টি, পরিবহন বিমান ১৭০টি, প্রশিক্ষণ বিমান ১১১টি, হেলিকপ্টার ১৪৭টি, ৫টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে।

সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীও বেশ শক্তিশালী। ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীতে ৪টি সাবমেরিন রয়েছে এবং বর্তমানে আরো একটি নির্মাণাধীন রয়েছে। এ ছাড়াও অত্যাধুনিক ফ্রিগেট ও করভেট অন্তর্ভুক্ত আছে।

বাংলাদেশ :

২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ চীন থেকে পাঁচটি মেরিটাইম পেট্রোল ভেসেল, দুটি করভেট, ৪৪টি ট্যাংক, ১৬টি জেট ফাইটার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে।

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ৩৩টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত মোট কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার ও সংরক্ষিত বাহিনীতে রয়েছে ৬৫ হাজার কর্মী। দেশের প্রতিরক্ষা বাজেট হিসেবে রাখা হয় ১৫৯ কোটি মার্কিন ডলার। সম্প্রতি বাংলাদেশের নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’ নামে দুটি সাবমেরিন। টর্পেডো ও মাইন বহনকারী এই সাবমেরিন শত্রুজাহাজ ও অন্য সাবমেরিনকে আঘাত আনতে পারবে। সমরশক্তি বাড়াতে নৌবাহিনীতে রাখা হয়েছে মোট ১৬৬টি এয়ারক্রাফট। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৪৫টি, অ্যাটাক এয়ারক্রাফট ৪৫টি এবং হেলিকপ্টার রয়েছে ৬১টি। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মোট ট্যাংক রয়েছে ৫৩৪টি। সাঁজোয়া যান রয়েছে ৯৪২টি, ১৮টি স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি গান এবং ৩২টি রকেট প্রজেক্টর। ন্যাভাল অ্যাসেট হিসেবে আছে চারটি করভেট ও দুটি সাবমেরিনসহ ৯১টি তরী। শত্রু মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যবহার করছে ৬টি ফ্রিগেট।

বাংলাদেশ
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মোট ট্যাংক রয়েছে ৫৩৪টি ; ছবি : bangladeshdefence

এ ছাড়া মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফট এবং বাণিজ্যিক নৌযানের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়াও আছে ৯৪২টি বিভিন্ন ধরনের সাঁজোয়া যান, ১৮টি কামান ও ৩২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের যান। ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ চীন থেকে পাঁচটি মেরিটাইম পেট্রোল ভেসেল, দুটি করভেট, ৪৪টি ট্যাংক, ১৬টি জেট ফাইটার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে। সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ নামে পাঁচ বছর মেয়াদি চার ধাপের একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর প্রথম ধাপ ২০১১-২০১৫ সফলতার সঙ্গে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপ ২০১৬-২০২০ বাস্তবায়নাধীন। তৃতীয় ধাপ ২০২১-২০২৫ এবং চতুর্থ ধাপ ২০২৬-২০৩০ সালে বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে দ্বিতীয় ধাপের অংশ হিসেবে সামরিক অস্ত্র কেনা হচ্ছে। সরকার গত পাঁচ বছরে সামরিক খাতে কেনাকাটার জন্য বেশ কয়েকটি চুক্তি করেছে। এ পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ১৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকার অস্ত্র, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে সুনাম কুড়িয়েছে। এদের অনেকেই আছেন বিদেশ থেকে উন্নতমানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

Related posts

করোনায় আরও ৩১ জনের মৃত্যু

News Desk

প্রকাশ্যে মহড়া দেওয়া সেসব অস্ত্র কোথায়?

News Desk

সাগরে মাছ নেই, খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা

News Desk

Leave a Comment