প্রতিকূল পরিবেশ ও তীব্র লবণাক্ততার মধ্যেও বাগেরহাটের রামপালে বোরো ধানের আবাদ বেড়েছে। লবণ সহিষ্ণু জাত, উন্নত বীজ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সঠিক বীজ নির্বাচন ও সেচ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ফলন বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ উপজেলার জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত খাদ্যের পরিমাণ প্রায় দুই হাজার ৩৯১ মে.টন।
রামপাল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের চার হাজার ৩৭৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়। তবে পরে তা বেড়ে চার হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে গৌরম্ভা ইউনিয়নের ৫৩৫ হেক্টর, উজলকুড় ইউনিয়নের দুই হাজার ২৮০ হেক্টর, বাইনতলা ইউনিয়নের এক হাজার ২০ হেক্টর, রামপাল সদর ইউনিয়নের ৪৩০ হেক্টর, রাজনগর ইউনিয়নের ৬০ হেক্টর, হুড়কা ইউনিয়নের ৮ হেক্টর, পেড়িখালী ইউনিয়নে ২ হেক্টর, ভোজপাতিয়া ইউনিয়নে ২ হেক্টর, মল্লিকেরবেড় ইউনিয়নের ৫০ হেক্টর ও বাঁশতলী ইউনিয়নের ১২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক মারুফুল ইসলাম বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আবাদ খুবই ভালো হয়েছে। এবার পোকামাকড় দেখা যায়নি তবে ইঁদুরের উপদ্রুব রয়েছে। গাছ কেটে দিচ্ছে। একই কথা বলেন, মানিকনগরের মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো। পোকায় ধরেনি। এমন থাকলে ভালো ধান পাবো।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণা রানী মন্ডল বলেন, বিভিন্ন কারণে এ বছর বোরোর আবাদ বেড়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো গত বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলনে কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়েছে। সব ইউনিয়নে আবাদ সম্প্রসারণ কারা হয়েছে। প্রণোদনা পুনর্বাসনের মাধ্যমে কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। লবণ সহিষ্ণু জাতের ধান ব্রি-৬৭ ও বিনা ধান ১০ জাত সরবরাহের বৃদ্ধি, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের ওপর আস্থা বাড়া, সার-বীজ সঠিক সময়ে সরবরাহ, ন্যায্যমূল্য ও কৃষি যান্ত্রিকিকরণের ফলে আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, কৃষকের ফলন যাতে বাড়ে সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সবকিছু করা হবে।
রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন জানান,আমরা মাঠ পর্যায়ে বোরো আবাদ বৃদ্ধির জন্য সবকিছু করছি। সার, বীজ ও কৃষিতে যান্ত্রিকিকরণ হয়েছে। এ উপজেলায় দায়িত্ব গ্রহণের পর কৃষকদের সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। আশাকরি আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, গত ২০২১ অর্থ বছরে বোরোর আবাদ হয়েছিল চার হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৮০ হেক্টরে যা গত বছরের চেয়ে ৩৫ হেক্টরের বেশি। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৩৭৪ মে.টন। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১৮ হাজার ৫৮৫ মে.টন। যা বেড়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৭৮৯ মে.টনে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশানুরূপ ফলন হতে পারে বলে কৃষি সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।