করোনার প্রথম ডোজ টিকাদান বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কায় নারায়ণগঞ্জের ভ্রাম্যমাণ টিকাকেন্দ্রে মানুষের ঢল নেমেছিল। আজ শনিবার সকাল থেকে শহরের চাষাঢ়া জিয়া হল প্রাঙ্গণে অসংখ্য নারী-পুরুষকে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে অনেকেই টিকা না পেয়ে ফিরে গেছেন।
তবে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ডোজ টিকাদান বন্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যাঁরা আজ টিকা নিতে পারেননি, তাঁরা কাল রোববার নিতে পারবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আজ সকাল সাতটায় শহরের আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ টিকা নিতে চাষাঢ়া জিয়া হল প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন। কেন্দ্রের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গাদাগাদি করে টিকাপ্রত্যাশীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে নারীদের সারি জিয়া হল থেকে পশ্চিম দিকে ট্রাফিক পুলিশ বক্স পর্যন্ত এবং পুরুষদের সারি পূর্বদিকে সুগন্ধ্যা জুসের দোকান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল।
সকাল থেকে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে টিকা পাননি। টিকা নিতে আসা নারী–পুরুষদের একটি বড় অংশ স্থানীয় বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন বলে জানা গেছে। তাঁরা বলেন, টিকা নেওয়ার জন্য প্রতিদিন কারখানা থেকে ছুটি নেওয়া সম্ভব নয়। কারখানার মালিকেরাও তাঁদের টিকা নেওয়ার জন্য ছুটি দিতে চান না।
পেশাককর্মী মর্জিনা বেগম বলেন, ‘আজ টিকা নিতে আসব বলে কারখানায় অনুপস্থিত ছিলাম। টিকা তো নিতে পারলাম না, কালকে আবার কীভাবে আসব? এক দিন কাজ না করলে বেতন থেকে টাকা কেটে রাখে।’
গৃহিণী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রথম ডোজ টিকাদান বন্ধ হয়ে যাবে বলে শুনেছেন তিনি। তাই বেশ সকালে টিকাকেন্দ্রে এসেছেন। দুপুর ১২টার দিকে জানানো হয়েছে, আজ আর টিকা দেওয়া হবে না।
পোশাককর্মী মো. সোহাগ বলেন, সকাল থেকে অনেক মানুষ টিকা নিতে এসেছেন। টিকা দেওয়া হবে ৩০০ জনকে, কিন্তু হাজারের বেশি মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কত মানুষ আজ টিকা পাবেন, এটা যদি সকালেই জানিয়ে দেওয়া হতো, তাহলে এমন ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভ্রাম্যমাণ ওই কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০০ নারী–পুরুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সহকারী রানী বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিন তাঁদের ভ্রাম্যমাণ টিকাদানকেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০০ জনকে সিনোভ্যাকের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে অন্য দিনের তুলনায় আজ অনেক মানুষ ভিড় করেছিলেন। সবাইকে টিকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় অনেকেই ফেরত গেছেন।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন আ ফ ম মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র থেকে দুটি বুথে ৩০০ থেকে ৫০০ ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রথম ডোজ টিকা প্রদান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমন খবরে হঠাৎ মানুষের চাপ বেড়েছে। তবে সরকার এখনো প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া বন্ধের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। টিকা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়, তাই চাইলে হঠাৎ করে টিকা বাড়ানো সম্ভব হয় না। আজ যাঁরা টিকা না পেয়ে ফেরত গেছেন, তাঁরা কাল কেন্দ্রে এলে টিকা নিতে পারবেন বলে জানান তিনি।