নতুন সাজে সাজতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ সচিবালয়। কারণ, প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (নিকার) ও সচিব সভায় সচিবালয়ে সশরীর হাজির হওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কিন্তু বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরের পর থেকে থেমে গেছে সব আয়োজন।
দুটি সভা আগামী রবিবার (২৭ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সময়ও অপরিবর্তিত থাকছে। এসব তথ্য বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রাহাত আনোয়ার।
উল্লেখ্য, তিন বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সশরীর সচিবালয়ে এসে নিকার ও সচিব সভায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। বেলা সাড়ে ১১টায় নিকার ও ১টায় সচিব সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে নতুন সাজে সাজতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ সচিবালয়। ইতোমধ্যে সচিবালয়ের বিভিন্ন দেয়াল সংস্কার করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে নতুন রং। কেটে-ছেঁটে ফেলা হয়েছে সচিবালয়ের ভেতরের বিভিন্ন বাগানের আগাছা। বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের গায়ে ঝুলিয়ে রাখা ব্যানার-ফেস্টুনও খুলে ফেলা হয়েছে। সংস্কারকাজ চলছিল বিভিন্ন ভবনের বৈদ্যুতিক লাইনের, বিশেষ করে ৬ নম্বর ভবনের। তা-ও থেমে গেছে।
আদালতের একটি রায়ের কারণে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন করা সম্ভব নয় বিধায় দু-এক দিনের মধ্যেই সচিবালয়ের বাইরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল সচিবালয়ের ভেতরে অবাধে বিচরণ করা কিছু বেওয়ারিশ কুকুর।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে এক বছরেরও বেশি সময় পর সচিবদের সঙ্গে সভা করছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে গত বছরের ১৮ আগস্ট রাজধানীর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে সভা হয়েছিল। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন।
সূত্র আরও জানিয়েছে, আগামী রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় দেশে ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ নামে নতুন দুটি বিভাগ গঠনের প্রস্তাব উঠবে বলে জানা গেছে।
‘পদ্মা’ বিভাগে থাকছে বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচটি জেলা— ফরিদপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর আর ‘মেঘনা’ বিভাগে থাকছে বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালীর ছয়টি জেলা— কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর এবং নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর।
ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন এ দুটি বিভাগ হলে দেশে বিভাগের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টি। এর আগের সব বিভাগের নাম স্থানীয় শহরের নামে হলেও এবার প্রথমবারের মতো দেশের প্রধান দুই নদীর নামে দুটি বিভাগ হতে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২১ অক্টোবর ও ৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা বিভাগ হবে ‘মেঘনা’ নদীর নামে ও ফরিদপুর বিভাগ হবে ‘পদ্মা’ নদীর নামে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সংস্কারকাজ আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। কারণ, প্রধানমন্ত্রী রবিবার আসছেন না সচিবালয়ে। তবে কাজগুলো চলমান রাখা প্রয়োজন কারণ সচিবালয় দেশের প্রধান প্রশাসনিক দফতর। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সচিবালয়ের ভেতরকার ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে। এটি চলমান থাকবে।
তিনি আরও জানান, সচিবালয়ের সীমানাদেয়ালের অনেক স্থানেই রং উঠে গেছে। অনেক পরিত্যক্ত ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো ছিল, সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দেয়ালগুলো আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দেশের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের ছাদসহ নিরাপত্তা নজরদারিতে রেখেছেন, যা এখন চলমান থাকবে।
সভায় অগ্রাধিকার থাকবে যেসব বিষয়ে
সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২৭ নভেম্বর করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবিলায় সচিবদের দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণে যে খাদ্য সংকটের পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভায় এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী সচিবদের বিশেষভাবে নির্দেশনা দিতে পারেন। একই সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় রাখতে করণীয় সম্পর্কেও প্রধানমন্ত্রী সচিবদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
এ ছাড়া সরকারি কাজে আর্থিক বিধিবিধান অনুসরণ করা, নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, সরকারি সেবা দিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারবিষয়ক পরিকল্পনা, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি বিষয়ে পর্যালোচনা, কৃষির উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সারের জোগান নিশ্চিত করা, পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় নিয়ে আসতে করণীয় ঠিক করা এবং সুশাসন ও শুদ্ধাচার নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল রারিক জানিয়েছেন, অনেক দিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীর সচিবালয়ে আসার কর্মসূচি ছিল। এখন তা পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে সচিবালয়ের পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সচিবদের সঙ্গে এই সভা করবেন তিনি।