চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলী খেলার ১১৫তম আসর শুরু হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল)। খেলায় অংশ নিতে আগ্রহীরা ইতিমধ্যে আয়োজক কমিটির কাছে নাম জমা দিতে শুরু করেছেন। এদিকে এ খেলাকে কেন্দ্র করে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল থেকে লালদিঘী ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় বসেছে বৈশাখী মেলা।
আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও মেলা কমিটির সভাপতি ও আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার জব্বারের বলী খেলা লালদিঘীর ময়দানে হবে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এবার বলী খেলা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার থেকে বৈশাখী মেলা শুরু হয়ে মেলা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত।’
বুধবার সকালে মেলায় গিয়ে দেখা গেছে, নগরের আন্দরকিল্লা মোড় থেকে শুরু হয়ে টেরিবাজার সোনালী ব্যাংক মোড় এবং লালদিঘী ময়দান হয়ে কোতোয়ালি থানার মোড় পর্যন্ত এলাকায় মেলা বসেছে। একইসঙ্গে মেলা বসেছে কেসিদে রোডের সিনেমা প্যালেসসহ আশপাশের এলাকায়। মেলায় গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন লোকজ শিল্পের পাশাপাশি দোকানিরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন শিশুদের খেলনা, গৃহস্থালি সামগ্রী দা, ছুরি ও বটিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এ ছাড়া মেলায় নানা ধরনের হস্তশিল্প এবং ফল ও ফুলের গাছ নিয়ে পসরা সাজিয়েছে বিক্রেতারা।
স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার থেকে মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও বিক্রেতারা আরও কয়েকদিন আগে থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য নিয়ে এসে পসরা সাজাচ্ছেন।
মেলায় লালদিঘির পাড়ের পুরাতন সিএমপি কার্যালয়ের প্রবেশ পথে বেতের তৈরি বিভিন্ন ফার্নিচারের পসরা সাজিয়েছেন গিয়াসউদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। তিনি জানান, সিলেট থেকে এসব ফার্নিচার বিক্রির জন্য এনেছেন। প্রতি বছর এ মেলায় বেতের তৈরি ফার্নিচার তিনি বিক্রি করতে আসেন। মানভেদে তার বেতের তৈরি প্রতি সেট ফার্নিচারের দাম ২২ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত।
মোজাহের হোসেন নামে এক হাতপাখা বিক্রেতা বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশে। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানসহ সবাই হাতপাখা তৈরিতে অভিজ্ঞ। মেলা উপলক্ষে বাড়তি শ্রমিক দিয়ে এসব হাতপাখা তৈরি করা হয়েছে। জব্বারের বলী খেলায় হাতপাখা বিক্রি হয় বেশি। এবার গরম বেশি তাই বিক্রিও বেশি হবে।
নজরুল ইসলাম নামে এক ফুল ও ফলের চারা বিক্রেতা জানান, মেলায় ফুল-ফলসহ গাছের চারার চাহিদা বেশি। ক্রেতাদের কাছে আমসহ একটি গাছের দাম হাঁকাচ্ছেন চার হাজার টাকা। তবে তার কাছে ৫০, ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি ওবায়েদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বুধবার থেকে মেলা বসতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার মেলার পাশাপাশি বলী খেলা হবে। মেলার নিরাপত্তায় কোতোয়ালি থানা-পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। মেলাকে ঘিরে কোনও চাঁদাবাজি হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলা উপলক্ষে লালদীঘি অভিমুখী সব যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ। এ জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, ‘১৯০৯ সালে এই মেলার আয়োজন শুরুর পর কখনও বন্ধ ছিল না। তবে গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে জব্বারের বলী খেলা ও বৈশাখী মেলার ১১১ ও ১১২তম আসর বাতিল করা হয়। এরপর থেকে পুনরায় প্রতি বছর যথাসময়ে মেলা ও খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জানা গেছে, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুবকদের সংগঠিত করতে ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বকশিরহাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর চালু করেছিলেন বলী খেলা।