‘প্রেমিকার’ মা-বাবার সঙ্গে দেখা করা ছাড়া ফিরবেন না প্রেমকান্ত
বাংলাদেশ

‘প্রেমিকার’ মা-বাবার সঙ্গে দেখা করা ছাড়া ফিরবেন না প্রেমকান্ত

‘প্রেমের টানে’ ভারতের তামিলনাডু রাজ্য থেকে গত ২৪ জুলাই বরিশালে আসেন প্রেমকান্ত। পরদিন একটি কলেজের সামনে কথিত প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করেন। বিভিন্ন জায়গায় আরও দুই বার তার সঙ্গে দেখা করেছেন বলে দাবি প্রেমকান্তের। কিন্তু তরুণী তাকে এখন ‘এড়িয়ে চলছেন’। তারপরও হাল ছাড়েননি প্রেমকান্ত। নাছোড়বান্দা যুবক দেখা করতে চান তরুণীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এ কারণে বরগুনায় এসেছেন। তাদের সঙ্গে দেখা না করে দেশে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে প্রেমকান্তের কর্মকাণ্ডে বিব্রত হয়ে আইনি সহায়তা পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছে তরুণীর পরিবার। প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে বরগুনার তালতলী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন তার বাবা। 

আরও পড়ুন: ‘প্রেমের টানে’ আসা ভারতীয় যুবকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ 

অভিযোগের বিষয়ে প্রেমকান্ত বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় এবং আমি আমার প্রেমিকার আমন্ত্রণেই বাংলাদেশে এসেছি। ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই তরুণীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। প্রথমে সে আমার টিকটক ভিডিওতে লাইক-কমেন্ট করতো। এরপর আমাদের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ হয়। সেখান থেকে প্রেম। এমনকি ওই তরুণীর পরিবারের সঙ্গেও আমার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। অনেক আগেই আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে আর আসা হয়নি।’

প্রেমকান্ত জানান, গত ২৪ জুলাই তিনি বরিশালে আসেন। এরপর শহরের একটি হোটেলে ওঠেন। পরদিন দুপুর ১২টায় বরিশালের একটি কলেজের সামনে দুই জন দেখা করেন। দুপুরে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে খাবার খান। ওই দিন বিকালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে পুনরায় তারা দেখা করেন, কথা বলেন। এ সময় তরুণীর সঙ্গে তার কয়েকজন বান্ধবীও ছিল। ২৭ জুলাই তারা আবারও বরিশাল শহরে ঘুরতে বের হন। এ সময় কাশিপুর এলাকায় গেলে এক যুবক দাবি করেন, তার সঙ্গে ওই মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক আছে। এরপর ওই যুবক প্রেমকান্তকে মারধর করেন। এ সময় তার কাছ থেকে টাকাও ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনায় তাকে তিন রাত থানায় থাকতে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন প্রেমকান্ত।

তিনি বলেন, ‘বরিশালে আসার পর তিনবার আমাদের দেখা হয়। কিন্তু তারপর থেকেই সে আমাকে এড়িয়ে যেতে শুরু করে। কী কারণে এড়িয়ে চলছে তা আমি জানি না। বিষয়টি বিস্ময়কর। তিন বছরের সম্পর্ক কোনও ছেলে খেলা না। কেবল তার কথা ভেবেই আমি এ দেশে এসেছি। আমার একমাত্র লক্ষ্যই হলো তার সঙ্গে দেখা করা। আমি তাকে বিয়ের জন্য জোর করছি না। আমি চেষ্টা করেছি তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। তাদের সঙ্গে দেখা না করে দেশে ফিরবো না।’

আরও পড়ুন: ‘প্রেমের টানে’ ভারত থেকে আসা যুবকের বিচার চান তরুণী

প্রেমকান্তের কথিত প্রেমিকা বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়। একপর্যায়ে সে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি প্রত্যাখ্যান করি। বাংলাদেশে এসে আমার পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার কথা জানায়। আমি বিষয়টি গুরুত্ব দিইনি। সবশেষ এ মাসের শুরুতে সে আমাকে জানায়, দেখা করতে বাংলাদেশ আসবে । আমি তাকে আসতে নিষেধ করি। কিন্তু কোনোভাবেই তা মানতে নারাজ। ২৪ জুলাই বরিশালে এসে আমি যে কলেজে পড়ি ওই কলেজের সামনে ঘোরাঘুরি করে খুঁজতে থাকে।’

লোক দিয়ে মারধর করানো ও প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে তরুণী বলেন, ‘এসব কথা ডাহা মিথ্যা। আমার সঙ্গে তার ওখানে দেখাই হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সে যখন খুব ঝামেলা শুরু করে, আমি অনিরাপদ বোধ করতে শুরু করি এবং আমার মা-বাবাকে অবহিত করি। তারা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে প্রেমকান্তকে আমার মা-বাবা জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনও অভিযোগ আছে কিনা। সেখানে সে ঢাকা এসে ভারতে চলে যাবে বলে আসে। কিন্তু সে না গিয়ে বরিশালে ঘোরাফেরা করে আমার নামে মিথ্যা কথা রটাচ্ছে।’

থানায় অভিযোগ প্রসঙ্গে তরুণীর বাবা বলেন, ‘আমরা জানতাম সে ঢাকা থেকে শনিবার ভারতে চলে যাবে। কিন্ত হঠাৎ শুক্রবার জানতে পারি তালতলীতে এসেছে। সে তালতলী এসে আমার মেয়েকে আবারও প্রেমিকা দাবি করে এবং নানা ধরনের কথাবার্তা ছড়ায়। আমি স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমার মেয়ের সঙ্গে ভারতীয় ওই যুবকের কোনও সম্পর্ক নেই। সে এখানে এসেও আমাদের সামাজিক মর্জদা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।’

আরও পড়ুন: প্রেমের টানে বরিশাল এসে মার খেলেন ভারতীয় যুবক

তালতলী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিক প্রেমকান্ত শুক্রবার দুপুরের দিকে তালতলী আসেন। খবর পেয় আমি সেখানে পুলিশ পাঠিয়ে তাকে নিরাপত্তার জন্য নজরদারিতে রাখি। বিকাল ৫টার দিকে তালতলী থেকে বরগুনায় চলে গেছেন বলে জেনেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করছে বলে লিখিত অভিযোগ করেছেন তরুণীর বাবা। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। প্রমাণ হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

বরগুনা সদর সার্কেলের পুলিশ সুপার মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা শুনেছি ভারতীয় এক যুবক প্রথমে বরিশালে, সেখান থেকে তালতলী এবং তালতলী থেকে এখন বরগুনায় অবস্থান করছেন। আমরা তার সঙ্গে কথা বলে নিরাপদে ভারতে পরিবারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নেবো। তার বিরুদ্ধে এক কলেজছাত্রীর বাবা অভিযোগ করেছেন। সে বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।’

Source link

Related posts

বদির এলাকায় মডেল মসজিদ নির্মাণে মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট ব্যবহার

News Desk

ডুবন্ত ফেরি উদ্ধারের সক্ষমতা নেই ৩ জাহাজের, খোঁজ মেলেনি ইঞ্জিনচালকের

News Desk

ভাসানচরে যেতে হলে সরকারের অনুমতি লাগবে

News Desk

Leave a Comment