রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলায় ফসলি জমি থেকে ভেকু (খনন যন্ত্র) দিয়ে প্রতিদিন মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। শত শত ট্রাক মাটি কাটা হচ্ছে উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চরআফড়া গ্রামের গতমপুর সেতুর নিচ থেকে। এতে জমি পতিত হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে সেতুটিও ঝুঁকিতে পড়েছে। ট্রাক থেকে রাস্তায় মাটি পড়ে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
সরেজমিন দেখা যায়, অপরিকল্পিতভাবে সেতুর নিচে ফসলি জমি থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ট্রাকে ভর্তি করছে। এতে সেতুর নিচে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। আশপাশের জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া সেতু থেকে রায়নগর স্লুইসগেট বাজার পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় ট্রাক থেকে মাটি পড়ছে। এতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে রাস্তা। এসব মাটিবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে বিভিন্ন স্থানে খাদ তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক চলাচল করায় ধুলাবালিতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকার স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী মহল মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে। তার সঙ্গে আবার নদীর বাঁধের ওপরও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এলাকাবাসীরা প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে কেউ কোনও কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। তবে স্থানীয়রা এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, তমিজ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন মাটি কাটা ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। তারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। এ কারণে কেউ কোনও প্রতিবাদ করার সাহস পান না। বাধা দিলেই তাদের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হেনস্তার স্বীকার হতে হয়।
তবে মাটি উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে তমিজ উদ্দিন বলেন, যেখান থেকে মাটি তোলা হচ্ছে, সেখানে আগে ধান চাষ হতো। বন্যার পানি আসায় ওপরে বালু পড়েছে। এ কারণে জমিতে ফসল হয় না। সেখানে আমাদের কয়েকজনের জমি আছে। সেখান থেকেই মাটি কেটে ভাটায় বিক্রি করছি। তবে বর্ষায় পলি এসে জমি আবার আগের মতো হয়ে যায়। আর গর্ত ভরাট না হওয়া পর্যন্ত সেখানে মাছ চাষ করা হয়।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) পাংশা উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হাসান জানান, ভেকু দিয়ে সেতুর নিচ থেকে মাটি কাটলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য সেতুর আশপাশের থেকে মাটি কাটা ঠিক নয়।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আলী বলেন, হাবাসপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর মাসিক সভায় একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কৃষিজমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ। এটা বন্ধে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করা হয়। দিনে অভিযান চালালে রাতে মাটি তোলে। সেতু এলাকা থেকে মাটি উত্তোলনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।