‘আন্দোলনে আহতদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের কঠিন পথটা সহজ করতে চিকিৎসকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। হাজার হাজার আহতের মধ্যে অনেকে অঙ্গ হারিয়েছেন। তাদের সাধারণ জীবনে পুনর্বাসনের প্রধান কাজটি করতে হবে চিকিৎসকদের। সেজন্য প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি জানা।’ কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও পুনর্বাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ সোসাইটি অব ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহেবিলিটেশনের (বিএসপিএমআর) সভাপতি অধ্যাপক মো. তসলিম উদ্দিন।
রবিবার (২৮ অক্টোবর) কুমিল্লার একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনে রোগীর চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
এসময় বক্তারা বলেন, ‘আন্দোলনে আহতদের ঘিরে আমাদের আজকের আয়োজন। আন্দোলনে গিয়ে আমাদের অনেক ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আহত হয়ে অঙ্গ হারিয়েছেন। তারা আর কখনও স্বাভাবিক চলাফেরায় ফিরতে পারবেন না। কিন্তু আমরা চিকিৎসকরা চেষ্টা করলে এই কঠিন রাস্তাটি সহজ করতে সহায়তা করতে পারি।’
চিকিৎসকরা বলেন, ‘যারা অঙ্গ হারিয়েছেন তাদের কয়েকটি ধাপে চিকিৎসা করতে হবে। প্রথম পর্যায়কে গোল্ডেন আওয়ার বলে। এই সময়ে যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু যায় জটিলতা তত কম হয়। পরবর্তী পর্যায়ে কার্যকরী রিহ্যাবিলিটেশন চিকিৎসার প্রয়োজন। এটি একটি সমন্বিত চিকিৎসাব্যবস্থা যেখানে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কার্যকরী ক্ষমতা, জীবনযাত্রার মান উন্নত ও পুনরুদ্ধার করতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ পর্যায়ে আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল অর্থরাইটিস, বিভিন্ন সহায়ক ডিভাইসের পাশাপাশি মানসিক ও ভোকেশনাল সাপোর্টের প্রয়োজন।’
এসময় চিকিৎসকরা বলেন, দেশে স্পাইনাল কর্ড এফেক্টেড রোগীদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র নেই বললেই চলে। অথচ এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া অঙ্গহানি হওয়া রোগীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রও তেমন নেই। যা আছে সেগুলোও প্রত্যাশিত অবস্থায় নেই। সরকার এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এসময় তারা কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে চালু হওয়া ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রশংসা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান বাংলাদেশ সোসাইটি অফ ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের সভাপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব ফিজিক্যাল মেডিসিনের নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক মো. তসলিম উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার এবং একই সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি এবং বিএসএমএমইউ’র সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ কে আজাদ। অনুষ্ঠানে প্যানেল অব এক্সপার্ট হিসেবে ছিলেন বিসিজি ট্রাস্ট মেডিক্যাল কলেজের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. আবু তসলিম, সেন্ট্রাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক কাজী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মিনহাজুল রহমান তারেক ও নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আ ন ম ইলিয়াস। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইস্টার্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রুহিনী কুমার দাস, ময়নামতি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. নাজমুস সাদাত।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রধান এবং বাংলাদেশ সোসাইটি অব ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন কুমিল্লা জোনের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সোহাগ চক্রবর্তী।
সাইন্টিফিক সেমিনারের স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রধান ডা. মো. মহিবুর রহমান রাফি এবং কুমুদিনী উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রধান ডা. ফাতেমা নেওয়াজ। এছাড়াও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইফফাত ইসলাম খান সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরেন।
কুমিল্লা ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ সারাদেশের মেডিক্যালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ চালু করা হয়। সরকারি সীমিত সম্পদ ব্যবহারের পাশাপাশি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও চিকিৎসকদের সহায়তায় বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি ডিভাইস সরবরাহের মাধ্যমে এই বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এই বিভাগ থেকে প্রতিদিন গড়ে ১২০ থেকে ২০০ জন রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন এবং গত দুই বছরে প্রায় চল্লিশ হাজার রোগী বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিয়েছেন। আন্তঃবিভাগ থেকে ফিজিক্যাল মেডিসিনে ১২০ জন এবং ফিজিওথেরাপি সেবা পেয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার রোগী। এখানে একটি বৈকালিক ফিজিওথেরাপি সেবা চালু রয়েছে। আছে ছোট পরিসরে লাইব্রেরি এবং অর্থোসিস ও প্রস্থেসিস মিউজিয়াম।