বন্যা চোখ রাঙাচ্ছে নদী বেষ্টিত কুমিল্লায়। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে জেলার নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বেড়ে কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আগামী ২৫ জুনের মধ্যেই নদীগুলোর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। একইসঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় গোমতী নদীর ব্যারেজ খুলে দিলে যেকোনও সময় প্লাবিত হবে এই জেলা।
তবে এই বন্যায় কুমিল্লা জেলা শহরের কোন ক্ষতি হবে বলে সোমবার (২০ জুন) বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা এলাকার গোমতী নদীতে আরও ১০ বছর আগে একটি ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। ওই ব্যারেজটি ভারতের ভেতর থাকা গোমতীর ১৭ কিলোমিটার এলাকার পানি আটকে রাখে। যদি ত্রিপুরা এলাকা থেকে ওই ব্যারেজ খুলে দেওয়া হয় তাহলে কুমিল্লার গোমতী এলাকার আশপাশে কৃত্রিম বন্যা সৃষ্টি হবে। যা কুমিল্লার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
আরও জানা গেছে, গোমতী নদীতে পানির বিপৎসীমা হলো ১০ দশমিক ৭৫ মিটার। সোমবার (২০ জুন) বিকাল ৪টা পর্যন্ত গোমতীর পানি ১০ দশমিক ৫০ মিটারে উঠে গেছে। এটি বিপৎসীমার মাত্র ২৫ সেন্টিমিটার নিচে আছে। চলমান বৃষ্টি হতে থাকলে ২৫ জুন পর্যন্ত কুমিল্লার গোমতীর ১০৩ কিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হবে।
জেলার বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে জেলার তিতাস, মেঘনা, চরকাঁঠালিয়া, গোমতী, ডাকাতিয়া ও কাকড়ি নদীতে পানি বেড়েছে। তিতাস উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, তিতাস উপজেলার মজিদপুর, কড়িকান্দি, নারায়ণদিয়া, জিয়ারকান্দি, বলরামপুর, সাতানি, জগৎপুর, কলাকান্দি ইউনিয়নজুড়ে চরকাঠালিয়া নদীর বেড়িবাঁধের রাস্তায় ভাঙন ধরেছে। উপজেলার আসমানিয়া বাজারে গোমতীর ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। এতে এক হাজার ৫০০ পরিবার সরাসরি বন্যাকবলিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দাউদকান্দি উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, এই উপজেলার দাউদকান্দি সদর উত্তর, শ্রীরায়েরচর, পাঁচগাছিয়া ও গৌরীপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। সোমবার এসব এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান মেজর (অব.) মোহাম্মদ আলী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিনুল হাসান। এ সময় তারা গোমতী নদী এলাকা পরিদর্শন করে উপজেলার সব ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে প্রস্তুত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদেরকে নির্দেশ দেন।
চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকায় এখনও স্বাভাবিক রয়েছে। তবে এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।
দেবিদ্বার উপজেলায় খবর নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার জাফরগঞ্জ, ফাতেহাবাদ ও পৌর এলাকার কিছু চরে পানি ঢুকেছে। যদি এভাবে বৃষ্টি হতে থাকে কিছু বেড়িবাঁধ ও রাস্তা যেকোনও সময় ভেঙে যেতে পারে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক মো. শাহাদাত হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেসব উপজেলায় নদী আছে সেসব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি নিতে জানানো হয়েছে। যেসব এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র আছে সেগুলো প্রস্তুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’