মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি স্বল্পতার কারণে পদ্মা পার হতে যাত্রী ও যানবাহন চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাংলাবাজার ঘাটে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা কেটে যাচ্ছে তাদের। তবু ফেরির সিরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকামুখী মানুষের স্রোতের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কোনোভাবেই যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করে কূল পাচ্ছে না ফেরিগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি ফেরি বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে গেলে পুনরায় ফেরিটি বাংলাবাজার ঘাটে এসে যানবাহন নিতে দুই ঘণ্টা লাগছে। এতে ঘাটে অপেক্ষামান যাত্রীদের দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে পড়েছে।
ঘাটে অপেক্ষায় থাকা যানবাহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই নৌপথে ফেরি কম থাকায় ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে আটকে থাকতে হয়। বাংলাবাজার ঘাট থেকে সবগুলো ফেরি ছেড়ে গেলে দীর্ঘ সময় লাগে ফিরে আসতে। সব মিলিয়ে এই নৌপথে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা যায়, এই নৌপথে পাঁচটি ফেরি চলাচল করতো। যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় শনিবার নতুন একটি ফেরি যুক্ত করা হয়েছে।
সরেজমিনে বাংলাবাজার ঘাটে দেখা গেছে, ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে হাজার হাজার মানুষ ফেরি ও লঞ্চে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছেন। ঘাটের সব নৌযানে উপচে পড়া ভিড় ছিল যাত্রীদের। ৩ ও ৪ নম্বর ঘাটে ব্যক্তিগত যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়াল এবং কয়েক হাজার মোটরসাইকেল পদ্মা পার হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।
শরীয়তপুর থেকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স চালক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গতকাল রাত ৩টার দিকে ঘাটে এসে সিরিয়াল দিয়েছি। দুপুর সাড়ে ১২টা বেজে গেছে। এখনও ফেরিতে উঠতে পারিনি। ফেরি কম থাকায় এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের।
৩ নম্বর ফেরিঘাটে অপেক্ষায় থাকা মো. লিটন বলেন, গাড়ি নিয়ে ঘাটের সিরিয়ালে আটকে আছি। এত কম ফেরি চলাচল করে, সিরিয়াল পাচ্ছি না। পাঁচ-ছয় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। মানুষের এই দুর্ভোগ নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবনা নেই। আমাদের অবস্থা শোচনীয়।
বাংলাবাজার ৪ নম্বর ফেরিঘাটে দেখা গেছে, মোটরসাইকেলের দখলে পুরো ঘাট। এক কিলোমিটারজুড়ে মোটরসাইকেলের লাইন। সবাই পদ্মা পারের অপেক্ষায় আছে। কুঞ্জলতা নামে একটি ফেরি দিয়ে চার নম্বর ঘাটের মোটরসাইকেল পার করা হচ্ছে।
মোটরসাইকেল চালকরা জানান, প্রচণ্ড গরমে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ঘাটে। একটি ফেরি ছেড়ে গেলে অনেকক্ষণ পরে ঘাটে ফিরে। এজন্য ঘাটে যানজট লেগে আছে।
মোটরসাইকেল চালক মনসুর আহমেদ বলেন, এবার এত মোটরসাইকেল বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে অনেকে বিভিন্ন পেশা ছেড়ে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। আমিও ভাড়ায় চালাই। গতকাল রাতে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে খুলনা এসেছি। সকালে ঘাটে এসে দুপুর পর্যন্ত পার হতে পারিনি। জানি না কখন পার হবো।
হায়াৎ আলী বলেন, বরিশাল থেকে এসেছি। তিন ঘণ্টা ধরে ঘাটে দাঁড়িয়ে আছি। স্ত্রী আর সন্তানকে পাশের মসজিদে বসিয়ে রেখেছি। ঘাটে আটকে আছি, ফেরি নেই। কখন ফেরি আসবে জানি না।
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই নৌপথে ছয়টি ফেরি চলছে। মাঝিরকান্দি দিয়ে চলছে আরও চারটি। রবিবার থেকে অফিস খোলা থাকায় শনিবার ভিড় বেড়েছে ঘাটে। তবে ঘাটে মোটরসাইকেলের চাপ অনেক বেশি। এজন্য জট লেগেছে।