ফেসবুক লাইভে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে ‘পেটানোর হুমকি’ দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছে চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ (২৫)। এ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারে বেড়েছে পুলিশের তৎপরতা। সাজ্জাদ হোসেনের অবস্থান সংক্রান্ত তথ্য পুলিশকে দিতে পারলে তথ্যদাতাকে উপযুক্ত অর্থ পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পটপরিবর্তনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সাজ্জাদ। খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ, জমি দখলসহ নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। এসব অপকর্মের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ১০টির বেশি মামলা রয়েছে বিভিন্ন থানায়।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকালে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা করা হচ্ছে যে, চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ বুড়ির নাতি সাজ্জাদকে আইনের আওতায় আনার জন্য যে/যারা উক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. সাজ্জাদ হোসেনের অবস্থান সংক্রান্ত সঠিক তথ্য দিয়ে গ্রেফতারে পুলিশকে সহায়তা করবে তাকে/তাদের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে উপযুক্ত অর্থ পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হবে। উল্লেখ্য যে, সংবাদদাতার/তথ্যদাতার/গ্রেফতারে সহায়তাকারীর পরিচয় অবশ্যই গোপন রাখা হবে।’
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) মো. রইছ উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসিকে ফেসবুক লাইভে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। হুমকি দেওয়া সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গ্রেফতারে আমাদের অভিযান চলমান আছে। বায়েজিদ থানা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে গ্রেফতারে কাজ করছে। সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করলে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কার দেওয়া হবে।’
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাত ১০টা ৩৯ মিনিটে নিজের ফেসবুক লাইভে এসে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফ হোসেনকে পেটানোর এ হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ফেসবুক লাইভে সাজ্জাদ হোসেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলে, ‘কোনও অবস্থাতেই আমার হাত থেকে ওসি আরিফ বাঁচতে পারবেন না। ওসি আরিফ দেশের যে প্রান্তেই থাকেন না কেন, তাকে নগরীর অক্সিজেন মোড়ে ধরে এনে পেটাবো। প্রয়োজনে মরে যাবো, কিন্তু হার মানবো না।’ পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ করে সাজ্জাদ বলে, ‘ওসি আরিফ চাঁদাবাজিসহ আমার সন্তান হত্যায় জড়িত। তাকে যাতে বদলি করা হয়।’
এ প্রসঙ্গে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, ‘ফেসবুক লাইভে এসে সাজ্জাদের হুমকির বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১০টির বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একাধিক হত্যা মামলা। গত কয়েকদিনে তার (সাজ্জাদ) বেশ কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। এ কারণে সাজ্জাদ আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলমান আছে।’
কে এই সাজ্জাদ?
চট্টগ্রামের এক সময়ের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খান। আলোচিত এইট মার্ডার মামলার দণ্ডিত এই আসামি ২০০০ সালে একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেফতার হয়। ২০০৪ সালে জামিনে বেরিয়ে সে বিদেশে পালিয়ে যায়। এ সাজ্জাদের শিষ্য হাটহাজারী থানার শিকারপুর গ্রামের সোনা মিয়া সওদাগর বাড়ির মো. জামালের ছেলে ছোট সাজ্জাদ।
বর্তমানে নগরীর অক্সিজেন-কুয়াইশ এলাকার দখল নিয়ে লড়াই চলছে ছোট সাজ্জাদ ও অপর সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলার মধ্যে। এরই জেরে গত বছরের ২৯ আগস্ট রাতে কুয়াইশ-অক্সিজেন সড়কে মো. আনিস (৩৮) ও মাসুদ কায়ছারকে (৩২) গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পৃথক মামলাতেই আসামি সাজ্জাদ।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামীর কালারপুর এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে প্রকাশ্যে গুলি চালায় সাজ্জাদ।
এর আগে, গত বছরের গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় সহযোগীদের নিয়ে গুলি করে সাজ্জাদ। আর গত বছরের ২৭ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গিয়েও গুলি করে সাজ্জাদ।
গত ২১ অক্টোবর চান্দগাঁও থানার আদুরপাড়া এলাকায় মাইক্রোবাসে এসে দিবালোকে গুলি করে আফতাব উদ্দিন তাহসীন (২৬) নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে সাজ্জাদ আবারও আলোচনায় আসে।
গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা পুলিশ অস্ত্রসহ ছোট সাজ্জাদকে গ্রেফতার করে। পরের মাসে সে জামিনে বেরিয়ে আসে।
পুলিশকে গুলি করে পালায় সাজ্জাদ
চান্দগাঁওতে ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীন খুনের পর সাজ্জাদকে গ্রেফতারে তৎপর হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড় জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনে সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদকে ধরতে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় সাজ্জাদ। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ চার জন আহত হয়। পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে সাজ্জাদ চলে গেলেও তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয়।
পুলিশ তখন জানিয়েছিল, সাজ্জাদের অবস্থান শনাক্ত করে গভীর রাত সাড়ে ৩টা থেকে ভোর ৪টার দিকে অভিযানে যায় পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই সাজ্জাদ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে পাশের একটি ভবনের ছাদে লাফিয়ে পালিয়ে যায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসী।