বগুড়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক শিশু গুলিবিদ্ধ ও জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আল রাজি জুয়েলসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৭ জন এবং তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এছাড়া হরতাল সমর্থকদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে আরও ছয় জন আহত হয়েছেন।
হরতালের সমর্থনে সড়ক অবরোধ করলে রবিবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহর ও শহরতলির কয়েকটি স্থানে এসব ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হরতালের সমর্থনে রবিবার সকাল থেকে শহরের গোকুল খোলারঘর এলাকায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে ভাঙচুর ও পিকেটিং করছিলেন হরতাল সমর্থকরা। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেখানে র্যাবের একটি টহল দল এসে পিকেটারদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতেও মহাসড়ক না ছাড়লে সকাল ১০টার দিকে বগুড়া থেকে ডিবির একটি টহল দল সেখানে গিয়ে শটগানের গুলি ছোড়ে। এতে মো. মাহী (১৪) নামে এক কিশোর গুলিবিদ্ধ হয়। তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে গোকুল খোলারঘর জামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বলা হয়। সঙ্গে সঙ্গে শত শত নারী-পুরুষ মহাসড়কে অবস্থান নেন। গ্রামবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। শুরু হয় সংঘর্ষ। আহত মাহীকে শহরের রফাতউল্লাহ কমিউনিটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপির সমর্থকরা। তাদের সরিয়ে দিলে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হন। এর মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। আহতদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।’
এদিকে, সকাল থেকে শহরের নবাববাড়ি সড়কের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তারা নবাববাড়ি সড়কে যানবাহন থামিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর করেন। একই সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শহরের সাতমাথায় শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের আয়োজন করে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তাদের মিছিল গালাপট্টি সড়কে মুখোমুখি হলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সেইসঙ্গে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এরপর বেলা ১১টা এবং দুপুর ১২টার দিকে আবারও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একে-অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। ইটপাটকেলের আঘাতে জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক উদয় কুমার বর্মণ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা নাইমসহ অন্তত আট জন আহত হন। পাশাপাশি বিএনপির ৯ নেতাকর্মী আহত হন।
অপরদিকে, দুপুর ১২টার দিকে শহরের বাঘোপাড়া খোলারঘর এলাকায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেছেন হরতাল সমর্থকরা। এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হ। এতে সদর থানার ওসি সাইহান ওলিউল্লাহ, ডিবি পুলিশের সদস্য ইসমাইল ও মোস্তফা আহত হন। একপর্যায়ে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফিরোজা পারভীন বলেন, ‘দুপুরে একটি মন্দির পরিদর্শন শেষে শহরে ফিরছিলাম। বাঘোপাড়া খোলারঘর এলাকায় এলে আমার গাড়িতে হামলা চালায় হরতাল সমর্থকরা। তাদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে আমার গাড়ির কাচ ভেঙে গেছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছি। এ ঘটনায় আইনের আশ্রয় নেবো।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএসের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা রায়হান তালুকদার রানা বলেন, ‘সকালে গোকুল, চারমাথা, বারপুর এলাকায় টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ ও রফাতউল্লাহ কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ক্যানসার হাসপাতালের তিনটি অ্যাম্বুলেন্স ভাঙচুর করেছে হরতাল সমর্থকরা। এতে শিশুসহ ছয় জন আহত হন।’
জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, ‘নবাববাড়ি সড়কের দলীয় কার্যালয়ের সামনে হরতাল কর্মসূচি পালন করছিলাম আমরা। পরে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। সেইসঙ্গে পুলিশ গুলি ও টিয়ারশেল ছুড়েছে। এতে আমাদের ৯ নেতাকর্মী আহত হন।’
জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি বলেন, ‘হরতালবিরোধী মিছিল নিয়ে শহরের গালাপট্টি এলাকায় গেলে আমাদের ওপর হামলা চালান বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের হামলায় আমাদের দফতর সম্পাদক জুয়েলসহ অন্তত আট নেতাকর্মী আহত হন। এর মধ্যে পাঁচ জনকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।’
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. স্নিগ্ধ আখতার বলেন, ‘সংঘর্ষে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ঠিক কত রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়া হয়েছে, তা এখন বলতে পারছি না। পরে জানাবো।’