বগুড়ায় মুজিব মঞ্চ, পুলিশ বক্স ও আ.লীগ কার্যালয়ে আগুন
বাংলাদেশ

বগুড়ায় মুজিব মঞ্চ, পুলিশ বক্স ও আ.লীগ কার্যালয়ে আগুন

বগুড়ায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে কার্যালয়ের পাশেই মুজিব মঞ্চ, পুলিশ বক্স ভাঙচুর এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অস্থায়ী কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা এসব ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় তারা পোস্ট অফিস, জাসদ অফিস ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যালয়ও ভাঙচুর করেছেন। 

সেখানে থাকা চারটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছেন। এসব সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে যমুনা টিভির ব্যুরো প্রধান মেহেরুল সুজন, দৈনিক করতোয়ার স্টাফ ফাটোগ্রাফার শফিকুল ইসলামসহ চার সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি বলেছেন, ‘আমার ব্যক্তিগত দুটি কার্যালয় ভাঙচুর করে লুটপাট করে সব নিয়ে গেছে কোটা আন্দোলনকারীরা। তারা বগুড়ায় তাণ্ডব চালিয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, মুজিব মঞ্চ, পুলিশ বক্স ভাঙচুর এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অস্থায়ী কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আসার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা মারমুখী হয়ে ওঠেন। তারা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করেন। সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা হামলাকারীদের প্রতিহত করেনি। এতে জনগণের মাঝে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, পূর্ব কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে জিলা স্কুলের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল নিয়ে বের হন। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় আসেন। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ও জিলা স্কুলের ছাত্রদের ওপর হামলা চালান। এতে শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর পাল্টা হামলা চালালে তারা পালিয়ে যান। এরপর কোটাবিরোধীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা শহরের সাতমাথার পাশে টেম্পল রোডে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। পাশে আওয়ামী লীগ নেতা রনির ব্যক্তিগত দুটি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। সেখানে পুলিশ বক্স, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অস্থায়ী কার্যালয় ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়া হয়। আগুনে কার্যালয়গুলো পুড়ে যায়।

বগুড়ায় মুজিব মঞ্চ, পুলিশ বক্স ও আ.লীগ কার্যালয়ে আগুন

সেখানে থাকা পুলিশ ও বিভিন্ন ব্যক্তির চারটি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। পরে তাদের সঙ্গে ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীরা যোগ দেওয়ায় আরও সহিংস হয়ে ওঠেন। কোটাবিরোধীরা প্রধান ডাকঘরের জানালার কাচ ও সাইনবোর্ড ভাঙচুর করেন। পাশে ভিত্তিপ্রস্তরসহ মুজিব মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়। এরপর তারা জেলা জাসদ কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে হামলা চালান।

এসব ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কোনও পুলিশ কর্মকর্তা এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।

তবে বগুড়া সদর থানার সেকেন্ড অফিসার রহিম উদ্দিন বলেন, ‘কোটাবিরোধীদের হামলা প্রতিহত করার ব্যাপারে তাদের ওপর কোনও নির্দেশনা ছিল না। তাই আমরা অ্যাকশনে যাইনি।’

অন্যদিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে দুপুরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেন। শহরে ছিলিমপুর এলাকায় প্রতিষ্ঠানের সামনে বেলা সোয়া ১১টা থেকে বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত অবরোধ চলাকালে বিপুল সংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে। এতে ব্যাপক যানজটে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শিক্ষার্থীরা ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সোমবার (১৫ জুলাই) মধ্যরাতেও শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠান চত্বরে বিক্ষোভ করেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শত শত শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠান থেকে কোটাবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজ অতিক্রম করার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান। তখন দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। 

বগুড়ায় মুজিব মঞ্চ, পুলিশ বক্স ও আ.লীগ কার্যালয়ে আগুন

পরে ধাওয়া খেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরকারি শাহ্ সুলতান কলেজের মধ্যে আত্মগোপন করে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বনানী এলাকায় শাপলা চত্বরে মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ চলাকালে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শাজাহানপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসেও তাদের সরিয়ে দিতে পারেননি। এ সময় আল মুমিন নামে এক ফাটোগ্রাফারের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।

অপরদিকে কোটা সংস্কার ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা শহরের সাতমাথায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিলে বাধা ও ব্যানার কেড়ে নেয়। তখন দুপক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের বাধার মুখে মিছিল শেষ না করেই বাম নেতাকর্মীরা চলে যান।

মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত শহরের সাতমাথা জিরো পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে। শহরের সাতমাথা রণক্ষেত্র পরিণত হয়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সংঘবদ্ধ মোকাবিলায় হামলাকারীরা পালিয়ে যান।

Source link

Related posts

দুবাইফেরত ৩ প্রবাসীকে পথে নিঃস্ব করে দিলো ডাকাতরা

News Desk

২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনায় ৩ জনের মৃত্যু

News Desk

যেভাবে ২০ গ্রাম রক্ষা করলো সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ

News Desk

Leave a Comment