Image default
বাংলাদেশ

‘বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে’

১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরদিন লন্ডনের দ্য টাইমস পত্রিকায় বলা হয়- ‘সব কিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।’ একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকা-কে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’ কথাগুলো মিথ্যা ছিল না, মিথ্যা প্রমাণও করা যায়নি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই নারকীয় হত্যাকা-ের পর থেকে দুটি দশক ঘাতক ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা বহুভাবে চেষ্টা করেছে জাতির মন থেকে তার পিতাকে মুছে ফেলার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাঙালির হৃদয়ে রয়ে গেছেন স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল। বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু- এখনো বাঙালির কাছে এক ও অবিচ্ছেদ্য। আজ ৪৬ বছর পরও বাঙালি বঙ্গবন্ধুর অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি এক বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অনাবিষ্কৃৃত অবদানের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।

বাঙালিকে স্বাধীনতা এনে দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি যখন গড়ে তুলছিলেন, তখন একের পর এক ষড়যন্ত্রের জাল বিছিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। তারা চূড়ান্ত হানে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। একদল বিপথগামী সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। এই নারকীয় ঘটনায় বাঙালির মতো পুরো বিশ্বহতবাক হয়ে পড়ে। পশ্চিম জার্মানির নেতা নোবেলজয়ী উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, ‘মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।’

ঘাতকরা জাতির জনককে হত্যার মধ্য দিয়ে তার অবদান মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। এখনো শোকাবহ আগস্ট এলেই স্মৃতিকাতর হয় বাঙালি। অশ্রুসিক্ত চোখে স্মরণ করে জাতির পিতাকে। আজ শোকের মাসের শুরু। মাসজুড়ে নানা আয়োজনে তাকে স্মরণ করবে দেশ।

১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। ঘৃণ্যতম হত্যাকা- থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিণী আরজু মনি, কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়স্বজন। পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড ছুড়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল জাতির জনকের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

শোকাবহ আগস্টে সমগ্র জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর আর বেদনাবিধুর পরিবেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করবে। তবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এবার সীমিত পরিসরে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

কৃষক লীগ আয়োজিত প্লাজমা ও রক্তদান কর্মসূচি, খাদ্য বিতরণ ও আলোচনাসভার মধ্য দিয়ে শোকের মাসের কর্মসূচি শুরু হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা ১১টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আলোচনাসভা হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল সোয়া ৯টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন। ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৮টায় ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল সোয়া ৯টায় বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন। বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার কবরে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের শ্রদ্ধা নিবেদন। এদিন দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

Related posts

বরিশালে ঘর পাচ্ছে ১৩ হাজার ৭১৫ গৃহহীন পরিবার

News Desk

অতিরিক্ত গতিতে আরেক লেনে ঢুকে পড়ায় দুই বাসের সংঘর্ষ, প্রাণ গেলো ৫ জনের

News Desk

ভ্রমণ শেষে ভারত থেকে তিন দিনে ফিরলেন ১৫ হাজার পর্যটক

News Desk

Leave a Comment