দিনাজপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পার্শ্ববর্তী হামিদপুর ইউনিয়নের পাতিগ্রাম ও পাঁচঘরিয়াসহ কয়েক গ্রামের কয়েকটি বাড়িঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘরের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়াসহ ছয় দফা দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ এবং সমাবেশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় পার্বতীপুর উপজেলার পাতিগ্রাম মোড়ে ভূমি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
হামিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) ও পাতিগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদের, সফিয়া বেগম এবং পাঁচঘরিয়া গ্রামের আফিয়া বেগম জানান, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে কয়লা তোলার ফলে তাদের গ্রামের বাড়িঘরের দেয়াল ফেটে যাচ্ছে। বিষয়টি খনি কর্তৃপক্ষকে জানালেও গুরুত্ব দেয়নি। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা-কবরস্থান, রাস্তাঘাট সবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাটি দেবে রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে গ্রামে অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারে না। এসব ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তাদের।
তারা আরও জানান, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে এলাকার বেকারদের চাকরি, সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং রাস্তার পুনরায় মেরামত করতে হবে।। দাবি না মানলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানান তারা।
সমাবেশে ভূমি ও বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী, আইয়ুব আলী, ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের বক্তব্য রাখেন।
মতিয়ার রহমান বলেন, ‘এলাকার ভূগর্ভস্থ থেকে কয়লা তোলার কারণে প্রতিদিন নতুন নতুন বাড়িঘরে ফাটল দেখা দিচ্ছে। ফলে একপ্রকার আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে এলাকার মানুষ। আমাদের ক্ষতির ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা হলেও গুরুত্ব দিচ্ছে না। আমরা চাই, আমাদের বাড়িঘরে ফাটল, চলাচলের জন্য প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পুনরায় নির্মাণ, সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফান্ড প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে বেকারদের চাকরি, ভূমি অধিগ্রহণ করে ক্ষতিপূরণ প্রদান, বহিরাগতদের চাকরি দেওয়া বন্ধ করা, বসবাসরত চার হাজার পরিবারের মাঝে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা এবং কয়লা খনি ঘেরাও করবো আমরা।’
ফরহাদ আলী বলেন, ‘বাড়িঘরের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, রাস্তাঘাট ও খেলার মাঠ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে অসুস্থ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যাবো, রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে অ্যাম্বুলেন্স গ্রামে আসতে পারে না। এসব সমস্যা নিরসন করা জরুরি।’
এ ব্যাপারে জানতে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইসমাঈল বলেন, ‘বিক্ষোভের বিষয়টি আমার জানা নেই। ওই এলাকার মানুষের সমস্যা এবং যাবতীয় বিষয়ে কয়লা খনি কর্তৃপক্ষের দেখার কথা। যদি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনও বিষয় থাকে, তাহলে সেটি প্রশাসন দেখবে।’