বদির এলাকায় মডেল মসজিদ নির্মাণে মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট ব্যবহার
বাংলাদেশ

বদির এলাকায় মডেল মসজিদ নির্মাণে মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট ব্যবহার

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজে মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট, নিম্নমানের লোহা ও সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে মসজিদের নিচতলার ঢালাই করা গ্রেট বিমও ধসে পড়েছে।

জানা গেছে, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার পৌরসভা চৌধুরীপাড়া বিজিবি সড়কে পূর্ব পাশে হচ্ছে মডেল মসজিদটি।

মদিনা ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড  নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে কাজটি করছেন ইঞ্জিনিয়ার বুলবুল  হোসেন। আর কাজটির তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির কাছের লোকজন। তবে সরকার পতনের পর আটক হন সমালোচিত সাবেক এই এমপি আটক হন র‍্যাবের হাতে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মডেল মসজিদের ঢালাই কাজে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ১০ শ্রমিক কাজ করছেন। তারা খুব ধীর গতিতে কাজ করছেন। এত বড় একটি ভবনে মাত্র ১০ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। মূল ভবনের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা, নকশার কাজ, অজুখানা, টাইলস, শৌচাগারের কাজ এখনও শুরুই হয়নি।

টেকনাফ পৌরসভার চোধুরী পাড়ার বাসিন্দা এনামুল বলেন, কাজের শিডিউলকে তোয়াক্কা না করে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। মডেল মসজিদে অনিয়মের ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় প্রশাসনের যেন নেই কোনও দায়। আর এর মাধ্যমে মসজিদ ভবনের স্থায়িত্ব ও মান নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফ উপজেলার এক প্রকৌশলী জানান, সরকারের এমন একটি মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নে তেমন তদারকি নেই। ঢালাই নষ্ট সিমেন্ট দিয়ে করছে। নিজেই দেখালেন, বিমগুলোর ঢালাই কাজে লোহার পাতের বদলে সেন্টারিং কাজে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ।

স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, নিম্নমানের পাথরের ব্যবহার ও মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী নির্মাণস্থলে সাইনবোর্ড টানানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ঠিকাদার নিজের মতো করে নির্মাণ কাজ করছেন। তদারকি করার এখন কেউ নেই। আগে সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদি নিজেই তদারকি করতেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

টেকনাফ উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজে মেয়াদোত্তীর্ণ উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ বিষয়ে সাইট ইঞ্জিনিয়ার তরিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, নির্মাণ কাজে কোনও অনিয়ম হচ্ছে না। মেয়াদোত্তীর্ণ সিমেন্টগুলো আর ব্যবহার করা হচ্ছে না। লোহার রডগুলো খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন পড়ে ছিল তাই জং ধরেছে। এখানে সমস্যা ছিল। সব বিষয়ে ধরলে আমরা কাজ করবো কীভাবে?

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাফাকাত আলী বলেন, সরেজমিনে গিয়ে দেখি, কিছু নষ্ট হয়ে যাওয়া সিমেন্ট ছিল। সেগুলো যেন তারা নির্মাণ কাজে ব্যবহার না করে, সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, ‘নষ্ট সিমেন্ট দিয়ে ঢালাইয়ের কাজ করছে- বিষয়টিও দেখেছি। এসব দেখার পর কক্সবাজারের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।’

কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, মডেল মসজিদের নির্মাণকাজে ঠিকাদারের কারণে যতটুকু ত্রুটি হয়েছে, কোনও কাজের মান খারাপ হলে তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজের শিডিউল অনুযায়ী কাজ আদায় করে নেওয়া হবে।

ইসলামী ফাউন্ডেশনের কক্সবাজার উপ-পরিচালক ফাহমিদা বেগম বলেন, আসলে মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। সিমেন্ট রডগুলো খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন পড়ে ছিল তাই জং ধরেছে। গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলেছি, সেগুলো দিয়ে যেন কাজ শুরু না করে। আমরা পরিদর্শন করে তাদের সঙ্গে মিটিংয়ে বসবো।

Source link

Related posts

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোনও কোনও স্থানে ধীরগতি

News Desk

ঠাকুরগাঁওয়ে সাপের দংশনে গৃহবধূর মৃত্যু

News Desk

স্বস্তির বৃষ্টি নামল ঢাকায়

News Desk

Leave a Comment